কাকরাইল মোড়ে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনরত জবি শিক্ষার্থীরা

কাকরাইল মোড়ে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনরত জবি শিক্ষার্থীরা

চার দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে তৃতীয় দিনের মতো জড়ো হতে শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে কাকরাইল মসজিদের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এখানেই জুমার নামাজের পর থেকে গণঅনশনে বসার কথা শিক্ষার্থীদের।

বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকজন শিক্ষার্থী এখানে ছিলেন। শুক্রবার সকাল ৯টার পর থেকে একের পর এক শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন। সকাল ১০টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকরাও কাকরাইল মোড়ে এসে জড়ো হন।

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা গত তিনদিন ধরে যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। উল্টো আমাদের ওপর পুলিশি নির্যাতন চালানো হয়। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না। জুমার পরে আমরা গণঅনশনে বসব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো বেলাল উদ্দীন বলেন, আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বার্ষিক ৩০৬ কোটি টাকা বাজেট চেয়েছি। এটা কি খুব বেশি বাজেট? বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা দিলে রাষ্ট্র জিতে যাবে, হারবে না। আমাদের রাস্তায় রাখবেন না, প্লিজ।

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীর জন্য আমরা মাত্র তিন হাজার টাকা বৃত্তি চেয়েছি। এর ফলাফল প্রত্যন্ত গ্রামে চলে যাবে। যে বাবা ক্ষেতে কাজ করে সন্তানের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জোগাড় করে পাঠায়, তার জন্য উপকার হবে।

কাকরাইল মোড় জনদাবি বাস্তবায়নের নতুন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন।

অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন, এ দেশের প্রত্যেকটা নাগরিক তাদের অধিকার প্রত্যাশা করে। তিন দিন ধরে আমার শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে বসে দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে। কিন্তু এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সমাধান আসেনি। অথচ চাইলে প্রথম দিনই তার সমাধান করা যেত।

তিনি আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিপীড়িত, বঞ্চিত ও নিষ্পেষিত। আমরা এমন এক স্থানে উপনীত হয়েছি, যেখান থেকে ফিরে যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। আমাদের দাবি পূরণ না হলে এই কাকরাইল মোড় আরেকটি জনদাবি বাস্তবায়নের কেন্দ্রে পরিণত হবে। আমাদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত সরকার যদি হুমকি ধামকি দেয়, আমরা সেটাকে রুখে দেব।

এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ১০টায় কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক–শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটি সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছেন রইস উদ্দিন।

ঘোষণা অনুযায়ী, জুমার নামাজের পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে গণ–অনশনে বসবেন। আর সেই সমাবেশে যোগ দিতে পর্যায়ক্রমে বাসে আসছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জবি শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে গত বুধবার (১৪ মে) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার জন্য যাওয়ার সময় কাকরাইল মোড়ে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এরপর শিক্ষার্থীরা সেখানেই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

তারা জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা না করে ফিরে যাবেন না। পরে সেদিন রাতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, তার দিকে বোতল ছুড়ে মারাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। পরে গতকাল (বৃহস্পতিবার) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বিকেলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় ‘শাটডাউন’ ঘোষণা দেন।

পরে রাতে আলোচনার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন শিক্ষা উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাসায় দীর্ঘসময় বৈঠক করলেও কোনো সমাধান আসেনি। রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইসউদ্দীন জানান, শুক্রবার জুমার পর তারা গণঅনশনে বসবেন।

উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনবৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার তিন দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।