দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: লজ্জা ভুলে ওএমএসের লাইনে মধ্যবিত্ত

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: লজ্জা ভুলে ওএমএসের লাইনে মধ্যবিত্ত

পাবনার বেড়া পৌর এলাকার সিনেমা হল মোড়ে ওএমএসের ডিলার নূর ইসলামের বিক্রয়কেন্দ্র। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে সেখানে স্বল্প মূল্যে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি শুরু হয়। আজ রোববার সকাল সাতটায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দেড় শতাধিক মানুষ। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মার্জিত পোশাকের নারী-পুরুষকে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মধ্যবিত্ত পরিবারের। একান্ত নিরুপায় হয়ে লজ্জা ভুলে তাঁরা ওএমএসের দোকানে চাল ও আটা কিনতে এসেছেন।

তাঁদের মধ্যে হাতিগাড়া মহল্লার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ওএমএসের দোকানে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হবে কোনো দিনও ভাবেননি। দোকান থেকে যা আয় হতো, তাতে ভালোভাবেই সংসার চলে যেত। কিন্তু এখন কোনোভাবেই আর সংসার চালাতে পারছেন না। চাল, তেল, গ্যাস (সিলিন্ডার) থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের দামই নাগালের বাইরে। তাই লজ্জা লাগলেও লাইনে দাঁড়িয়েছেন। গতকালও দাঁড়িয়েছিলেন। তবে দেরিতে আসার কারণে চাল-আটা শেষ হয়ে যাওয়ায় নিতে পারেননি। তাই আজ তাড়াতাড়ি এসেছেন।

বেড়ায় স্বল্প মূল্যে ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে এভাবে নিম্নবিত্তদের সঙ্গে মধ্যবিত্ত অনেকেই বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর সামনে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় এবং বিগত দিনের চেয়ে এখন ওএমএসের চাল ও আটার মান ভালো হওয়ায় লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। এতে নির্ধারিত সংখ্যক ক্রেতার চেয়ে অনেক বেশি ক্রেতা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত অনেকে পণ্য পাচ্ছেন না। বরাদ্দের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় ডিলাররা বরাদ্দ বাড়াতে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ডিলার নূর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্ধারিত সংখ্যক মানুষের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অনেক সময় হাতাহাতিসহ অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া একশ্রেণির মানুষ প্রতিদিন একাধিক ডিলারের কাছে গিয়ে চাল–আটা কিনে বাইরে বিক্রি করছেন।

বেড়া বাজারের নাজিমবাজার এলাকার একটি ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চাল-আটার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন পৌর এলাকার সানিলা মহল্লার সালমা খাতুন, শাহানা খাতুন, বৃশালিখা মহল্লার লিলি খাতুন। তাঁরা জানান, সকাল নয়টায় এসে লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু এখন (বেলা সাড়ে ১১টা) জানতে পারছেন, আজকের মতো বরাদ্দের চাল–আটা শেষ হয়ে গেছে।

ওই বিক্রয়কেন্দ্রের ডিলার দুলাল মোল্লা বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ কেজি করে চাল ও আটা ২০০ মানুষের কাছে বিক্রির জন্য আমরা বরাদ্দ পেয়ে থাকি। কিন্তু লাইনে এসে দাঁড়াচ্ছেন বরাদ্দের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ। ফলে অনেকেই পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।’

খোলাবাজারের চাল ও আটা কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, এমনিতে বাজারে নিম্নমানের চাল ৪৮ টাকা ও আটা ৩৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অথচ ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রে চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৮ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর মানও বেশ ভালো। তাই তাঁরা ওএমএসের ডিলারের দোকানে ভিড় করছেন।

বেড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাউসারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, খোলাবাজারের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েই চলেছে। এ জন্য বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়ায় বেড়া পৌর এলাকার চারজন ডিলারের মাধ্যমে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চার টন চাল ও চার টন আটা বিক্রি হচ্ছে। জনপ্রতি ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল ও ১৮ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি আটা বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রিতে কোনোরকম অনিয়ম যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।