
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টা হামলায় পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় একের পর এক হামলা, ড্রোন হামলা এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সাধারণ মানুষের জীবনও পড়েছে হুমকির মুখে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরানের ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে সহায়তা চেয়েছে ইসরায়েল।
গত শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইসরায়েল তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইরানও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে। চলতে থাকে দফায় দফায় হামলা ও পাল্টা হামলা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহায়তা চায় তেল আবিব। সোমবার (১৬ জুন) এই তথ্য জানায় তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের কাছে ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে— যেন তারা ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করা ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সহযোগিতা করে। কান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের অনুরোধের জবাবে কিছু সহযোগিতা শুরু করেছে।
এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ জানিয়েছেন, ইসরায়েল তার দেশের কাছে দমকল সরঞ্জাম চেয়েছে এবং তারা তা দ্রুত সরবরাহ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ইরান যেন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু না করে— সেই আহ্বানও জানান তিনি।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইরানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া ঘোষণায় জানানো হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এখন ইরানের সেসব ঘাঁটিকে টার্গেট করছে যেখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যেই হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেড ইরানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে, “ইরান ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও প্রতিরোধ আন্দোলনের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।” তারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানি সেনা কর্মকর্তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জানায়— এই আত্মত্যাগ ইতিহাসে গর্বের অধ্যায় হয়ে থাকবে।
এই সংঘাতের ফলে শুধু ইসরায়েল-ইরান নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এখন ঝুঁকিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত না হলে, এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।