লন্ডনে বিডিআর হত্যাকাণ্ড বার্ষিকীর সিম্পোজিয়ামে বক্তারা

২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ক্রমাগত বিঘ্নিত হচ্ছে

২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ক্রমাগত বিঘ্নিত হচ্ছে

ওয়ান-ইলেভেনের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র ক্রমান্বয়ে বিঘ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার  জন্য কোনো আঞ্চলিক ফোরাম নেই।

গ্লোবাল বাংলাদেশীজ অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস (জিবিএএইচআর) এর উদ্যোগে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত হোয়াইট চ্যাপেল সেন্টারে "বিডিআর ম্যাসাকার ১৫ তম বার্ষিকী, প্রেক্ষাপট দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র" শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তকে অরক্ষিত করে পুরো দেশকে প্রতিবেশী দেশের কাছে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এটি দুই দেশের জন্যই বিপজ্জনক। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা সুদূর পরাহত থাকবে।

জিবিএএইচআর এর যুগ্ম আহ্বায়ক মেজর (অব) জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. হাসনাত এম হোসাইন এমবিই।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান, অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন। সাবেক বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান ও মেজর (অব.) সাফায়েত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

সিম্পোজিয়ামটি সঞ্চালনা করেন মোঃ জাকির হোসেন। 

সিম্পোজিয়ামে বক্তারা বলেন, ২০০১ সালের ১৫, ১৬ ও ১৯ এপ্রিল সিলেট সীমান্তের পদুয়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) এর সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। তিনটি সংঘর্ষেই বিডিআরের জোয়ানরা সাহসিকতার সঙ্গে বিজয় অর্জন করে। বিডিআর ছিল একটি শক্তিশালী প্যারামিলিটারি।

বক্তারা দীর্ঘ ১৫ বছর পরেও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন না হওয়া এবং কারাগারে অন্তত ৫০ জন গুরুত্বপূর্ণ আসামি ও সাক্ষীর রহস্যজনক মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাবলিক ইনকোয়ারি কমিটি ও মিলিটারি এনকোয়ারি কমিটির রিপোর্ট কোনটাই প্রকাশ করা হয়নি বলে এই হত্যাকাণ্ডে অসংখ্য প্রভাবশালী মানুষের জড়িত থাকার অভিযোগ মানুষের মনে সংশয়ের দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করেছে বলে তারা মন্তব্য করেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মেজর (অব.) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের উচিত অবিলম্বে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক ইনকোয়ারি কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা। 

তিনি বলেন, একদিনে এতো সামরিক কর্মকর্তার মৃত্যু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও ঘটেনি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসের এই রক্তাক্ত ঘটনার বিচার এখন সময়ের দাবি। জাতীয় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে যেমন আপোষ চলেনা তেমনি এই বিচার নিয়েও কোন আপোষ চলতে পারেনা। তিনি এ ব্যাপারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. হাসনাত এম হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন অধিকার ফিরে পাবে এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিচার তখনই সম্পন্ন হবে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ অফিসার ও পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে দেবে না।