স্বাধীনতার ৫৪ তম দিবস

একদলীয় শাসনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার শপথ

একদলীয় শাসনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার শপথ

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরুলেও একদলীয় শাসনের শৃঙ্খল আর দুঃশাসনে প্রায় সময়ই হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। যে মুক্তির এদেশের জনগণ চেয়েছিলো সে মুক্তি এখন বেহাত হয়ে গেছে। দেশের মানুষের এখন ভোটের অধিকার নেই, নেই কথা বলার স্বাধীনতা এবং নেই জীবনের কোনো নিরাপত্তা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতা আবারও লুট করা হয়েছিলো তা আবারও গণতন্ত্রের ছদ্মবেশ ধারণ করে দেড় দশকের বেশী সময় ধরে লুন্ঠিত রয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নব্য গঠিত একটি দেশকে বাকশালের কবল থেকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করে গেলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সে গণতন্ত্র এখন নির্বাসিত। দেশের মানুষ এখনো নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে লড়ছে। স্বাধীনতার ৫৪ তম দিবসের পরও জনতার এ লড়াই একদলীয় শাসনের কবল থেকে নিজেদের মুক্ত করে ভোট, মুক্তমত, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার। 

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ঢল নামে। 

প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশে সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধ চত্বর। এরপর বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এই সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঢাকা পুরাতন বিমান বন্দর (তেজগাঁও) এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ছয়টি গান ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে। 

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়ার শুভেচ্ছা: এদিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। এক শুভেচ্ছা বার্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই বার্তায় ব্লিঙ্কেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকটে সাড়া দেয়া, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। আমাদের এই অংশীদারিত্ব একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার আরেকটি বছর উদ্যাপন করছে, তখন আমরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি এবং এই প্রচেষ্টাসমূহ বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ  করবে। দুই দেশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট বলেন, আমি এই বিশেষ দিনে সকল বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং আগামী বছরগুলোতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য আমরা উন্মুখ।

চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনকে লেখা শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ অবিচলভাবে তার স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছে, তার অর্থনীতির উন্নয়ন এবং জনগণের জীবিকা উন্নত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি দৃঢ়ভিত্তি স্থাপন করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। চীনা প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন যে, চীন ও বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব শক্তিশালী থেকে শক্তিশালীতর হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমাদের দুই দেশ দৃঢ় এবং গভীর রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ব্যবহারিক সহযোগিতা উপভোগ করেছে, যা দুই  দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা নিয়ে এসেছে।

শি জিনপিং আরও বলেন, তিনি চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে  বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন।

তিনি বলেন, রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনায় বিকশিত হচ্ছে, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রেক্ষিতে নানা যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করলে বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী এবং উভয়ের স্বার্থরক্ষা হবে। রুশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য এবং তার দায়িত্বশীল কাজে নতুন সাফল্য এবং বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশি জনগণের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।