হাঁসফাঁস গরমে চুয়াডাঙ্গায় ক্ষতির মুখে চাষি-খামারি

হাঁসফাঁস গরমে চুয়াডাঙ্গায় ক্ষতির মুখে চাষি-খামারি

তীব্র তাপপ্রবাহে দুবির্ষহ হয়ে উঠছে চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষের জীবন। প্রায়ই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকছে এ জেলায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। বিশেষ করে দুপুর ১২টার পর সড়কে বের হওয়া কঠিন। মনে হয় আগুনের হলকা ধেয়ে আসছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত মানুষের চলাচল তেমন থাকে না।

ক্ষেত-খামারেও ভরদুপুরে লোকজন থাকতে পারছেন না। অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় শ্রমিকরা কাজকর্ম কমিয়ে দিয়েছেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারি ও কৃষক।

গত ১৬ থেকে ১৯ এপ্রিল পরপর চার দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এই জেলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ১৭ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২১ এপ্রিলও ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়, ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে এটি দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত বছর ১৯ ও ২০ এপ্রিল তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জাহিদুল হক সমকালকে বলেন, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা কখনও মাঝারি, কখনও তীব্র, কখনও অতি তীব্র।

গত বুধবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দুপুরে জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে সড়ক ফাঁকা। মার্কেটগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই। দুই হাত মুখের সামনে রেখে রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় অনেককে। জেলা শহরের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা আখতার হোসেন বলেন, ‘দুপুরে রাস্তায় হাঁটলে মনে হয় আগুনের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি। চেষ্টা করি বেলা ১২টার মধ্যে বাইরের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে। বাড়িতে ফ্যানের বাতাসও গরম। সহ্য করা কষ্ট হয়ে পড়ছে।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষিনির্ভর জেলা। ভুট্টা, পান, শাকসবজি, আম ও ফুল উৎপাদন হয় অনেক। জেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত।

রয়েছে মুরগি, গরু, ছাগল, হাঁসের অনেক খামার। এ ছাড়া গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পালন করা হয় এসব প্রাণী। তীব্র গরমে পানচাষিরা রয়েছেন উভয় সংকটে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলার পানচাষি মোশারফ হোসেন জানান, গরমের কারণে বরজে পান নেতিয়ে পড়ছে। প্রতিদিন পানি দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বেশি পানি দিলে পান গাছে পানি ধরতে পারে। আবার পানি না দেওয়ায় সতেজতা হারাচ্ছে পান। বড়ও হচ্ছে না।

এ ছাড়া পেঁপে, কলাবাগান থেকে শুরু করে সবজি ক্ষেতে অতিরিক্ত সেচ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে কৃষকের। সেচের পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় পরিবর্তন করতে হচ্ছে কৃষকদের। দিনে পানি দিলে মাটি থেকে উত্তাপ ছড়ায়। মাটির উত্তাপ ও সূর্যের তাপের কারণে পানি গরম হয়ে চারাগাছ মারা যায়। চারাগাছে পানি দিতে হচ্ছে রাত ১০টার পর। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জের বাসিন্দা শফিকুল বলেন, ছয় বিঘা জমিতে পেঁপের চারা লাগিয়েছেন। মাটি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় ঘন ঘন সেচ দিতে হচ্ছে। খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বোরো ধান কাটার সময় হয়েছে। কেউ কেউ ধান কাটা শুরু করেছেন। বৃষ্টি না হওয়া ও তীব্র গরমের কারণে ধানে বেশি চিটা দেখা যাচ্ছে। এবার আমেও ভালো ফলন হবে না– এমন আশঙ্কা অনেকের। বিভিন্ন ফল ও সবজি বড় হচ্ছে না। উজ্জ্বলতাও হারাচ্ছে শাকসবজি।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় সাধারণত সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত দিনমজুররা ক্ষেত-খামারে কাজ করেন। বর্তমানে অনেকেই কাজে যাচ্ছেন না। যারা যাচ্ছেন, তারা ভোরে কাজে যোগ দিয়ে বেলা ১১টার মধ্যে বাড়ি ফিরছেন।

এদিকে প্রাণীর হিট স্ট্রোকের শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। মুরগির ডিম উৎপাদন কম হচ্ছে যে কোনো সময়ের তুলনায়। ঘন ঘন স্যালাইন খাওয়াতে হচ্ছে প্রাণীকে। এতে খরচ বাড়ছে খামারিদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, সেচের পানির ব্যবস্থা রয়েছে জেলার সব মাঠেই। তীব্র গরমের কারণে শাকসবজিতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সেচ বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।