সিরাজগঞ্জে প্রার্থীর পক্ষে গোপন বৈঠক করছিলেন ৫ প্রিজাইডিং অফিসার

সিরাজগঞ্জে প্রার্থীর পক্ষে গোপন বৈঠক করছিলেন ৫ প্রিজাইডিং অফিসার

সিরাজগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক প্রার্থীর পক্ষে গোপন বৈঠক করার অভিযোগে এক শিক্ষক ও ৫ প্রিজাইডিং অফিসারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঘটনায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

সোমবার রাত ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, যমুনা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও রাশিদাজ্জোহা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সেরাজুল ইসলাম, এসবি রেলওয়ে কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও হাজী ওমর আলী কওমি মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. আশরাফুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক ও এসবি রেলওয়ে কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. আবুসামা, বাহুকা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও বনবাড়িয়া পাইকপাড়া মডেল স্কুল পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বাচ্চু কুমার ঘোষ, জনতা ব্যাংক পিএলসি এর এরিয়া অফিসের প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা ও হরিণা বাগবাটি স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. ইয়াসিন আরাফাত।

এছাড়াও এই গোপন বৈঠকের মূল আয়োজক শিয়ালকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আমিনুর ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, রোববার রাত ৮টার দিকে আমাদের কাছে গোপন খবর আসে যে কতিপয় প্রিজাইডিং অফিসার এক প্রার্থীর সঙ্গে কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কাদাই গার্ডেন প্যালেস রিসোর্টে গোপন বৈঠক করছে। শোনার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ রিটানিং কর্মকর্তাসহ অভিযান পরিচালনা করেন। তবে তারা বুঝতে পেরে আগেই পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে রিটার্নিং অফিসার সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপার প্রযুক্তির মাধ্যমে সেখানে কারা ছিলেন তা চিহ্নিত করেন এবং পরবর্তীতে ৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও এই বৈঠকের মূল আয়োজককে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, আমরা সেখান থেকে ডিজিটাল ফুট প্রিন্ট সংগ্রহ করে নিশ্চিত হই সেখানে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর তার প্রেক্ষিতে ওই মামলায় আমরা ৫ জন প্রিজাইডিং অফিসারসহ বৈঠকের আয়োজনকারী মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করি। তিনি বলেন, আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছি সেখানে আরও কে কে উপস্থিত ছিলেন এবং এর সাথে আর কে কে জড়িত। তারপর সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা রিসোর্টটিতে অভিযান পরিচালনা করে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদে এর সত্যতা পাই।

এখানে আমাদের যে দশজন প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ইতোমধ্যেই আমরা তাদের পরিবর্তন করেছি এবং অন্যদের দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি বলেন, প্রার্থীকে আমরা শোকজ দিয়েছি এবং তার উত্তর তিনি দিয়েছেন।

পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন প্রার্থীর পক্ষে বৈঠক চলছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আশা করছি নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের পরে আমরা জানতে পারব তারা কোন প্রার্থীর জন্য একত্রিত হয়ে বৈঠক করছিল। যার নাম আসবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।