
দেশের তিন জেলায় সড়কে প্রাণ গেল ১৫ জনের। শুক্রবার ছুটির দিনে ময়মনসিংহের ফুলপুর ও তারাকান্দায় ৯ জন, নাটোরে জাবি শিক্ষার্থীসহ ৪ জন ও লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ২ জন নিহত হয়েছেন।
ময়মনসিংহ ব্যুরো ও ফুলপুর প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের ফুলপুর ও তারাকান্দায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর ফিসারির সামনে বাস-মাহেন্দ্রের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছ কমপক্ষে ১৫ জন। এদের ফুলপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাসটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল হাদি জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকাগামী শ্যামলী বাংলা পরিবহণের একটি বাসের সঙ্গে ফুলপুর থেকে হালুয়াঘাটগামী অপর একটি যাত্রীবাহী মাহেন্দ্রের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাসটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। মাহেন্দ্রটি দুমড়ে-মুচরে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থল পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে ৬টি মরদেহ উদ্ধার করে। হতাহতরা সবাই মাহেন্দ্রর যাত্রী।
ওসি জানান, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর কারণে উদ্ধারকাজে বিলম্ব হয়। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তিনি আরও জানান, বাস থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয় কমপক্ষে ১০-১৫ জন।
এদিকে শুক্রবার বিকালে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় সিএনজি ও অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই সিএনজির দুই যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও চারজন। পরে এদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
পুলিশ সুপার আখতার উল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ফুলপুর ও তারাকান্দায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। বেপরোয়া যান চলাচলের কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বাস ও সিএনজি চালকদের আরও সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের আহ্বান জানান।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে যাত্রীবাহী বাস-সিএনজির (থ্রি হুইলার) মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত আরও দুইজনের রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজনে। শুক্রবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে একজন দুর্ঘটনা কবলিত সিএনজি চালক নাটোর সদর উপজেলার হারিগাছা গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে মো. বাবু (৪০)। অপর তিনজন হলেন- ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাগর (৩৫) ও তার আত্মীয় রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং অপরজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি (৪০)।
হাইওয়ে পুলিশের ঝলমলিয়া ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল কালাম জানান, শুক্রবার বিকালে সিএনজি (ত্রি-হুইলার) চালক রাজশাহী থেকে যাত্রী নিয়ে নাটোরের দিকে আসছিলেন। একই সময়ে সিরাজগঞ্জ থেকে রাব্বি পরিবহণ নামে একটি যাত্রীবাহী বাস রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিল। পথে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নাটোর শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় পৌঁছালে সিএনজি-যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনায় সিএনজিটি দুমরে-মুচরে যায়। এ সময় সিএনজিতে থাকা ঢাকা মিরপুর এলাকার বাসিন্দা সিএনজি যাত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাগর ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং অপর তিনজন গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে নাটোর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সিএনজি চালক বাবুর মৃত্যু হয়। আহত দুইজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে তাদের মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পরপরই বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরের দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের উপজেলার বাউরা নবীনগর সরকারপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- পাটগ্রাম পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মির্জারকোর্ট এলাকার আলিউল ইসলামের ছেলে মেরাজ হোসেন (২২) ও একই এলাকার একরামুল হকের ছেলে অনিক ইসলাম (২৩)। এর মধ্যে অনিক শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এবং মিরাজ হোসেন ঘটনাস্থলে নিহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে মেরাজ হোসেন ও তার বন্ধু অনিক ইসলাম পাটগ্রাম পৌরসভার মির্জারকোর্ট গ্রামের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলযোগে পার্শ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের বড়মসজিদে (ভাঙ্গা মসজিদ) জুমার নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেড় হন। অনিক ইসলাম মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন। তার পেছনে বসা ছিলেন মেরাজ হোসেন।
মোটরসাইকেলটি লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের উপজেলার বাউরা নবীনগর সরকারপাড়া মোড়ে পৌঁছলে নীলফামারী থেকে ছেড়ে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল আরোহী মেরাজ হোসেন নিহত হয়। গুরুতর আহত অনিক ইসলামকে প্রথমে পাটগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাতীবান্ধা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়েছেন। অপর একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।-যুগান্তর