খালিদুজ্জামান খালিদ

‘নাগরিকদের আশা ছিলো- কঠিন মুহূর্তে রাষ্ট্র হয়তো এতটা অমানবিক হবে না’

‘নাগরিকদের আশা ছিলো- কঠিন মুহূর্তে রাষ্ট্র হয়তো এতটা অমানবিক হবে না’

ইদানিং বাড়িভাড়া মৌকুফ নিয়ে চারদিকে খুব তোড়জোড় চলছে। করোনা মহামারির এই সময়ে সারা বিশ্ব যখন নিজ দেশের নাগরিকদের জীবনমান নিশ্চিতকরণের জন্য নানামুখি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করছে, ঠিক একই সময়ে আমাদের দেশের নিন্মবিত্ত, নিন্ম-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো (পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ) নাগরিকদের সাম্প্রতিক দুর্ভোগ পাশ কাটিয়ে তুলনামূলক রুঢ় আচরণ করছে। মাইকিং করে বিল পরিশোধের নির্দেশনার পাশাপাশি অনাদায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নের হুমকি দেয়া হচ্ছে। নাগরিকদের আশা ছিলো-আর যাই হোক, এই কঠিন মুহূর্তে রাষ্ট্র হয়তো এতটা অমানবিক হবে না।

এই চরম অনিশ্চিত সময়ে নাগরিকদের কাঁধে বোঝার উপর শাকের আটির মত এক একটা দায় এসে বাস্তবতাকে আরো কঠিনতর করে তুলছে। দৈনন্দিন যাবতীয় খরচ যেমন- খাদ্যপন্য, জরুরী ঔষধ, যাতায়াত ভাড়া সব বেড়েছে, অপরদিকে আয়ের সুযোগ আর বেতন কমেছে। কোন প্রতিষ্ঠানে ৩০%/৪০%/৫০% পর্যন্ত কম বেতন প্রদান করা হচ্ছে। আরো কঠিন সত্য হচ্ছে - অনেককেই চাকরি থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে।

আমি নিজেও ভাড়া বাসায় থাকি! ভাড়া করা বাসা তো অন্তত ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা নিয়ে মানবিক আলোচনা হতেই পারে? ব্যয় মেটাতে না পেরে অনেকেই পরিবার নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে কিন্তু ভিন্ন পরিস্থিতির কারণে যাদের গ্রামে যাবার সুযোগ নাই আবার এই দুর্যোগের সময়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচের সামর্থ্যও নেই, তাদের জন্য ডাল-ভাতের পর বাড়তি অর্থের জোগান দেয়াটা সেই গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত অবস্থা। এইরকমই একটা হচ্ছে - বাচ্চারা স্কুলে না যেয়েও, ক্লাস না করেও তাদের অভিভাবকদের স্কুলের বেতন দিতে হচ্ছে, তাও আবার এমপিও ভুক্ত স্কুলের জন্য!

সরকার নির্ধারিত বেতনের বাইরে এরা সারাবছর ধরে বাড়তি অর্থ আদায় করে আসছে। ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়া নিশ্চিত করতে অভিভাবকেরা এই অন্যায় মুখ বুজে মেনে নিয়েছে। দেশীয় কারিকুলামে পাঠদান করেও স্কুলগুলো প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মাসিক বেতন ২-৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে থাকে। এর বাইরে আরো অনির্ধারিত খাতের অভাব নেই। একই স্কুলে পড়ালেখা চালিয়ে গেলেও প্রতিবছর নতুন করে ভর্তি হতে হয়, যার জন্য অভিভাবকদের গুনতে হয় ১৫-২৫ হাজার টাকা। সম্প্রতি ঢাকায় নামি-দামি স্কুলগুলো অভিভাবকদের শুধু বেতনের নোটিশ দিয়েই থেমে থাকেনি, তারা রীতিমতো বহিষ্কারের হুংকার দিয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে অনেক পরিবারই লোন করে তাদের অন্যায্য বকেয়া (!) বেতন পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে।

সরকার এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ কেন নিচ্ছে না? সরকারি চাকুরী ছাড়া এইসময়ে কারো আয়ের পথ মসৃণ নয়, কারো কারো চাকরি পর্যন্ত নাই। সেখানে না পড়িয়ে বেতন চাওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত- শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটা পর্যালোচনা করে অতিশীঘ্র ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, নাগরিকদের এই প্রত্যাশা।

লেখক- উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী