খিড়কি খুলতেই দেখা দিল আরেক পৃথিবী: নাসার টেস অভিযান

খিড়কি খুলতেই দেখা দিল আরেক পৃথিবী: নাসার টেস অভিযান

আকারে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি গ্রহের দেখা পেল মানুষ। ‘বাড়ি’ থেকে খুবই কাছে, মাত্র ৭৩ আলোকবর্ষ দূরে। নাসার টেস অভিযানে নতুন করে ধরা দিয়েছে তিনটি গ্রহ এদের একটি আকারে পৃথিবীর মাত্র সোয়া গুণ।

ভিনগ্রহ অনুসন্ধানের দুই যুগের ইতিহাসে টিওআই ২৭০বি নামের এই বহির্গ্রহটি সবচেয়ে ছোট। তবে এর তাপমাত্রা আমাদের কক্ষ তাপমাত্রার (যা হলো ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ১০ গুণ। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

গত বছর ১৮ এপ্রিল টেস উৎক্ষেপণ করেছিল নাসা। সেদিন আমাদের সময় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে অভিযানটির টেস অবজেক্টস অব ইন্টারেস্টের (টিওআই) ডেপুটি ব্যবস্থাপক নটালিয়া গুরেরো এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘আকাশকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে টেস।আকাশের শতকরা ৮৫ ভাগ অঞ্চলে সে সজাগ চোখ রাখবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভিনগ্রহের বৈচিত্র্যময় এক সম্ভার উপহার দেওয়ার আশা করছে টেস। আকারে পৃথিবী থেকে দ্বিগুণের ছোট এমন কয়েকশ ভিনগ্রহের দেখা মিলবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’

শান্ত-শীতল সূর্য শোনাল উত্তপ্ত পৃথিবীর গল্প
টেস যে তিনটি নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছে, এরা টিওআই ২৭০ নামের নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এটি আকারে ও ভরে আমাদের সূর্যের তুলনায় ৪০ শতাংশ ছোট ও হালকা। আর এর পৃষ্ঠ-তাপমাত্রা সূর্যের এক-তৃতীয়াংশ। সূর্যের পৃষ্ঠ-তাপমাত্রা পৌঁনে ছয় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

টিওআই ২৭০বি গ্রহটি এর মাতৃসূর্যের খুব কাছ দিয়ে ঘোরে। এমনকি আমাদের সূর্যের নিকটগ্রহ বুধ যত কাছ দিয়ে ঘোরে, তার চেয়েও ১৩ গুণ কাছের কক্ষপথ দিয়ে ঘোরে এটি। নক্ষত্রকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সাড়ে তিনদিনের কম সময় লাগে। এর তাপমাত্রা ২৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আলো এক সেকেন্ডে তিন কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। এ গতিতে আলো এক বছরে যত দূর যেতে পারে, সেই দূরত্বকে এক আলোকবর্ষ বলা হয়।

টেসের নতুন আবিষ্কারের মধ্যে অপর দুটি গ্রহ হলো- টিওআই ২৭০সি এবং টিওআই ২৭০ডি। আকারের কারণে এদের ‘পুঁচকে নেপচুন’ (যার ভর ১০টি পৃথিবীর সমান) বলা হয়। আকারে সি গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ২.৪ গুণ এবং ডি গ্রহটি ২.১ গুণ বড়। এদের তাপমাত্রা যথাক্রমে ১৫০ ও ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরা যথাক্রমে ৫.৭ ও ১১.৪ দিনে একবার তাদের সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পারে।

পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার দূরত্বকে এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক বলা হয়। আমরা সহজে বলতে পারি, এক সূর্য দূরত্ব। সেই হিসাবে টিওআই ২৭০ থেকে সি গ্রহটি রয়েছে আধেক সূর্য দূরে এবং ডি রয়েছে পৌনে সূর্য দূরের কক্ষপথে।

প্রত্যাশা পূরণের পথে
২০১৭ সালের জুনে এই প্রতিবেদককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসার বিজ্ঞানী নিকোলে কোলন টেসের প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, ‘আমরা হয়তো আগামী তিন বছরের মধ্যে পৃথিবীর সঙ্গে অনেকখানি সঙ্গতিপূর্ণ এমন একটা গ্রহ খুঁজে পেয়ে যেতে পারি।’ সেই কাক্সক্ষাই যেন পূরণ হওয়ার পথে।

কক্ষপথে পরিভ্রমণের সময় গ্রহরা যখন নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যায় (এ রকম ঘটনাকে ট্রানজিট বলা হয়), তখনই আলো আটকে যায়, ফিকে হয়ে আসে তারার উজ্জ্বলতা। আলোকপ্রভার সেই তারতম্য মেপে ওই গ্রহদের চিহ্নিত করছে নাসার এ কৃত্রিম উপগ্রহটি। এ জন্যই এর নাম রাখা হয়েছে ট্রানজিটিং এক্সোপ্লানেট সার্ভে স্যাটেলাইট বা টিইএসএস বা টেস।

এমআই