‘সামাজিক মাধ্যম ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে করের আওতায় আনা হবে’

‘সামাজিক মাধ্যম ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে করের আওতায় আনা হবে’

বিদেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট ও বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সামগ্রিক বিষয়টিকে যুগোপযোগী নিয়ম-নীতি ও করের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

রবিবার (৫ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান, ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব মো. নূর-উর-রহমান, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক প্রমুখ সভায় অংশ নেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অডিও-ভিডিওসহ নানা কন্টেন্ট প্রচার বর্তমান যুগের একটি ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবীতে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিনোদন থেকে শুরু করে নানা কন্টেন্ট সেখানে স্ট্রিমিং করা হচ্ছে, আমাদের দেশেও হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, এ নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে, সেন্সরবিহীন কন্টেন্ট প্রদর্শিত হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে সরকার ঠিকভাবে ট্যাক্স পাচ্ছে না।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওটিটি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। ফলে এসব মাধ্যম ব্যবহার করে সমাজ বিনির্মাণের যেমন সুযোগ আছে, সমাজকে অস্থিতিশীল করারও সুযোগ থাকে। আমরা সময়ে সময়ে দেখতে পাচ্ছি এসব মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব রটানো, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। একই সঙ্গে যুবা ও কিশোরদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছে। এটি একটি বাস্তবতা। এই মাধ্যমগুলো আমাদের ব্যবহার করতে হবে ঠিকভাবে।’

যারা সরকারের অনুমতি না নিয়ে এ ধরনের ব্যবসা করছে, তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা, আর কেউ যদি অনুমতি নিয়ে ব্যবসারত কিন্তু অননুমোদিত কন্টেন্ট প্রচার করে, তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে গ্রামীণফোন ও রবির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, গ্রামীণফোন যে উত্তর দিয়েছে, সেখানে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা নেই, আর রবি উত্তর প্রস্তুত করছে বলে জানিয়েছে। এগুলোকে একটি সমন্বিত নিয়মনীতির মধ্যে আনার লক্ষ্যেই আজকের সভা।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবক্তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দেশে এবং সারা পৃথিবীতেই এ নতুন বাস্তবতা মূল্যবোধ ও আইনগত নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ফলে যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা আগে সংযুক্ত ছিলাম না, সেগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র এবং এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসার সুযোগ রয়েছে, যা অবশ্যই করযোগ্য। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম যেমন নেটফ্লিক্স, ইউটিউব প্রভৃতির কাছে দেশের অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে, কিন্তু সেখান থেকে সরকার যেভাবে ট্যাক্স পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে না।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও শুরুতে এ রকমই অবস্থা ছিল, কিন্তু অনেক দেশে নিয়মনীতি প্রবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যেমন ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অন্য দেশের কন্টেন্ট দেখানোর ক্ষেত্রে নানা আইনকানুন, নিয়মনীতি প্রবর্তন হয়েছে। ভারতে চালু থাকার জন্য ফেসবুক ভারতীয় কোম্পানি হিসেবে রেজিস্টার্ড হয়েছে। আমাদের দেশে এখনো রেজিস্টার্ড হয়নি, তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় তারা একজন এজেন্ট নিয়োগ করেছে।’

ডাক ও টেলিযোগযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সব বিষয়ে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পরিচালকদের দায়িত্ববোধ প্রত্যাশা করি। আমাদের দেশের আইন ও সংস্কৃতিকে সম্মান দিয়েই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।’

সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট ও বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সামগ্রিক বিষয়টিকে যুগোপযোগী নিয়মনীতি ও করের আওতায় আনার লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (সম্প্রচার) আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়, যার অপর চার সদস্য হিসেবে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিটিআরসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধি ও একজন আইন বিশেষজ্ঞ।

অন্যদের মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন এবং মো. মিজান-উল-আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সিনিয়র সিস্টেমস অ্যানালিস্ট মসিউজ্জামান খান সভায় অংশ নেন।