ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্ত

জাকারবার্গ এখন কী করবেন?

জাকারবার্গ এখন কী করবেন?

ঢাকা, ২০ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : মার্ক জাকারবার্গের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ার কথা। ফেসবুক ‘ঠিক’ করার যে মিশনে তিনি নেমেছেন, তা আরো একবার ধাক্কা খেয়েছে। ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে ফেসবুক কী করছে, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ ছাড়া ফেসবুকের ব্যবসার মডেল এখন প্রশ্নের মুখে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্ত চাইছেন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদেরা।

অভিযোগ উঠেছে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। ওই অ্যাপের মাধ্যমেই কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। সেই তথ্য পরে ব্যবহার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের কাজে। এ কাজের সঙ্গে জড়িত এক অধ্যাপক সম্প্রতি মুখ খোলায় প্রকাশ্যে এসেছে সবকিছু। এখন পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদেরা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠান বলা হলেও ফেসবুকে বিনিয়োগকারীদের ইতিমধ্যে ধাক্কা খাওয়া শুরু হয়ে গেছে। সোমবার ফেসবুকের শেয়ারের দামে ধস নামে। এক দিনেই ফেসবুকের শেয়ারের দাম কমেছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার কোটি ডলার বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে।

ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে রাজনীতিবিদেরা প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে পাঁচ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের হাতে গেল, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কেউ অবশ্য এখনো মুখ খোলেননি।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা তাদের তথ্য বেহাত হওয়ার খবরগুলো পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ২০১৪ সালে ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা সব তথ্য তারা মুছে ফেলেছিল। তথ্য সুরক্ষা নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এ বিষয়টি জানার পর তারা এই পদক্ষেপ নেয়।

পুরো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সিলিকন ভ্যালির তথ্য ব্যবহার প্রসঙ্গে মারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ফ্র্যাঙ্ক প্যাসকল বলেন, ফেসবুকের তথ্য নিয়ে যা করা হয়, সেই কালো বাক্সের ঢাকনা খুলে গেছে। স্বভাবতই কুৎসিত চিত্রটিই সামনে এসেছে।

ফেসবুকের এ ঘটনা জানাজানি হওয়ায় ফেসবুকের ওপর আস্থার সংকট তৈরি হবে, এমনকি ব্যবসায়ী সুনাম নষ্ট হবে। ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচন ঘিরে ভুয়া খবর ছড়ানো ও ফেসবুক টুল ব্যবহার করে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার নাক গলানোর বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ফেসবুকের বিনিয়োগকারী রন বেটস মনে করেন, ‘আমরা কিছুটা উদ্বেগে রয়েছি।’

ফেসবুক সোমবার জানায়, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কার্যক্রম অডিট করতে তারা ডিজিটাল ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান স্টোরজ ফ্রেডবার্গকে নিয়োগ দিয়েছিল। তারা অডিটের সময় ওই ফরেনসিক প্রতিষ্ঠানকে সার্ভারে ও সিস্টেমে ঢোকার সম্পূর্ণ সুযোগ দিয়েছিল।

ফেসবুকে বিনিয়োগকারী নিউইয়র্ক সিটির স্কট স্টিংগার বলেন, ‘ফেসবুকে বিনিয়োগকারী হিসেবে আমরা ভয়ংকর খবরটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি।’

সাসটেইনালিটিক্সের গবেষণা ব্যবস্থাপক ম্যাথু ব্রাগ বলেন, ‘ফেসবুকে কিছু পরিবর্তন আসে কি না, আমরা সে বিষয়টি দেখছি। তাদের ব্যবসার মডেলটির সঙ্গে গ্রাহকের তথ্যের নাগাল পাওয়ার বিষয়টি যুক্ত। এসব তথ্যের তারা যত্ন করে কি না, তা বোঝা জরুরি।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওয়ালস্ট্রিটের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেসবুকের ব্যবসা মডেলেই পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে। এ প্ল্যাটফর্ম এখন আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের দাবি করবেন নিয়ন্ত্রকেরা।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রধান বলেছেন, তথ্যের অপব্যবহার হয়েছে কি না, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতিবিদেরা এ ব্যাপারে তদন্ত করবেন। যদি তা করা হয়, তবে তা নাগরিক প্রাইভেসি অধিকারের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন হবে।

নিউইয়র্ক টাইমস ও লন্ডন’স অবজারভারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ফেসবুককে আরো বেকায়দায় ফেলেছে। ওই প্রতিবেদনের পর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ফেসবুকের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা বলা হয়েছে। গত শনিবার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে তথ্য দিয়েছে ফেসবুক। ওই তথ্য মুছে ফেলার দাবি করা হলেও আদতে তা করা হয়নি।

ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুকের এ লোকসানের দিনে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে জাকারবার্গের মোট সম্পদের ওপরও। তাঁর মোট সম্পদের ৫১০ কোটি ডলার কমে গেছে। ফেসবুকের ১৬ শতাংশ শেয়ার তাঁর। মোট সম্পদ ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলার। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় পঞ্চম স্থান থেকে নেমে সপ্তম স্থানে চলে গেছেন তিনি।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেসবুকের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনাকে প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী পল গ্রিউয়াল ‘দুর্নীতি ও প্রতারণা’ বলেছেন। তিনি বলেন, ‘যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেওয়া হবে এবং যারা নিয়ম ভেঙেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

হার্ভার্ডে পড়াশোনার সময় ১৯ বছর বয়সে ২০০৪ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন জাকারবার্গ। পরে প্রতিষ্ঠানকে সময় দিতে গিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। বর্তমানে ২০০ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে ফেসবুকে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিসটার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৭০ কোটি ডলার আয় করে ফেসবুক। অনলাইন বিজ্ঞাপনের ৬০ শতাংশ গুগল ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের পকেটে যায়।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/এমআই/১৩০০ঘ.)