নির্বাচনের আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস

নির্বাচনের আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস

মনিরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়াচ্ছে সরকার। আপত্তিকর, ক্ষতিকর, বে আইনি পোস্ট ফিল্টার ও ব্লক করতে ডিভাইস বসানো হচ্ছে। আর এই প্রযুক্তি সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি। এই প্রকল্পে সরকারের খরচ হবে ১৪৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। টেকভ্যালি সল্যুশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে এই কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টেলিযোগাযোগ দপ্তরের কর্মকর্তাদের একটি টিম এখন এই কাজে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।

ইতিমধ্যে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে- সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স প্রোজেক্ট'-এর আওতায় এসব যন্ত্রপাতি বসানো হচ্ছে। এই প্রকল্পে ২,৭০০ জিপিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হবে। এই ব্যান্ডউইথ পুরো বাংলাদেশ এখন যা ব্যবহার করে, তার চারগুন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগেই এর অপারেশন শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিওয়ার্ড পদ্ধতিতে এই ফিল্টারিং ও ব্লকিংয়ের কাজ করবে। চিহ্নিত কনটেন্টগুলোর হুমকি বিবেচনায় নিয়ে তা ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা একই পদ্ধতিতে এখন সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট ফিল্টার করছে। তবে নতুন প্রকল্পে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরেও অন্যান্য অনলাইন কন্টেন্ট ফিল্টার করা হবে।

সরকার চাইছে নির্বাচনের আগে থেকেই ডিভাইস ভিত্তিক এই নজরদারি চালু করতে। এ বিষয়ে টেকভ্যালি সল্যুশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আহমেদ আদনান বলেন, আমরা নভেম্বর থেকে আশা করছি অপারেশনে যেতে পারব। আইসিটি মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে আমাদের পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছে। এটা সরকারের কোর প্রজেক্ট। পাঁচ বছর তো চলবেই। এরপর চাইলে আবার নবায়ন হবে।

তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট আনছি। তবে তাদের ইকুইপমেন্ট তৈরি হয় স্পেনে। এখনো ইকুইপমেন্ট আসেনি। তবে দ্রতই চলে আসবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূল কাজ হলো সাইবার থ্রেট প্রোটেকশন। আমাদের কাজ হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনের কন্টেন্ট ফিল্টারিং ও ব্লক করা। আমরা কিওয়ার্ড ভিত্তিক কাজ করবো। সেখানে অপরাধমূলক, পর্ন বা দেশের সমাজের জন্য ক্ষতিকর কিওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত থাকবে। থ্রেট অ্যানালাইসিস করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনে কন্টেন্ট ফিল্টারিং এবং ব্লকের কাজ এই পদ্ধতিতে এই প্রথম করা হচ্ছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিল্টারিং এবং ব্লকিংয়ের জন্য রেডিশন ডিজিটাল টেকনোলজি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানও প্রকল্প জমা দিয়েছে। তারা নির্বাচনের আগে ও পরে এই কাজে খরচ দেখিয়েছে ৫০ কোটি টাকা। তবে বিটিআরসি তাদের প্রকল্পের ব্যাপারে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে, কারণ, এটা দীর্ঘমেয়াদি নয়।

এনিয়ে তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সময়ের অভাবে ডয়চে ভেলে’র সঙ্গে কথা বলেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সবার ওপরে। এ কারণে আমরা নভেম্বরের আগেই এই প্রকল্পের কাজ আংশিক হলেও শুরু করতে চাই।

সম্প্রতি ঢাকায় ফেসবুকের সঙ্গে এক বৈঠকে তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী বাংলাদেশিদের ফেসবুক আইডি খোলার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র এবং মোবাইল ফোন নাম্বার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছেন। এদিকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সম্প্রতি বলেছেন, অনলাইনে গুজব প্রতিরোধে একটি মনিটরিং সেন্টার করা হচ্ছে, যা ২৪ ঘন্টা কাজ করবে।

এবিষয়ে ফেসবুক ডেভেলপার গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপক আরিফ নিজামী বলেন, এটা মূলত ট্র্যাকিংয়ের কাজ করবে। যেসব কনটেন্ট এনক্রিপ্টেড থাকবে তা-ও হয়তো ট্র্যাকের চেষ্টা করবে। শব্ধ ধরে ট্র্যাক করবে। আবার নির্দিষ্ট কোনো আইপি বা আইডিকেও ট্র্যাক করতে পারবে। এতে ব্যক্তির স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে তো নির্দিষ্ট ধরনের শব্দ থাকবে। হয়তো অপরাধমূলক। সাধারণ মানুষ তো এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন না।

তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং সাইবার অ্যাট হোমের চিফ অপারেটিং অফিসার সাবির আহমেদ সুমন বলেন, যখনই আপনি কোনো বিষয় ফিল্টার করবেন, সেটা যে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯ কোটি ৫ লাখ। আর ফেসবুক আইডি ৩ কোটি ১০ লাখ। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সম্প্রতি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাশ করা হয়েছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৭০০ঘ.)