খাশোগির সন্ধানে জঙ্গলে তল্লাশি

খাশোগির সন্ধানে জঙ্গলে তল্লাশি

ঢাকা, ১৮ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : সৌদি আরবের বিখ্যাত সাংবাদিক নিখোঁজ জামাল খাশোগির সন্ধানে ইস্তাম্বুলের বেলগ্রাড জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়েছে তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনী। তাকে হত্যার পর খণ্ডিত লাশ ওই জঙ্গলে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করছে নিরাপত্তা বাহিনী। খবর ইয়ানি শাফাকের।

খবরে বলা হয়েছে, ২ অক্টোবর সৌদি কনস্যুলেট থেকে যে গাড়ি বের হয়েছিল তা ওই জঙ্গলের দিকে গিয়েছিল। ওই গাড়িতে করে জামাল খাশোগির মৃতদেহ নেয়া হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে আটকে ফেলা হয় হয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, নির্যাতনের পর একটি টেবিলের ওপর নিয়ে তাকে জ্যান্ত জবাই করা হয়। এরপর হাড় কাটা করাতে টুকরো টুকরো করা হয়। সাত মিনিটের মধ্যেই শেষ হয় খাশোগি হত্যাযজ্ঞ। মৃত্যু চিৎকার যেন কানে না আসে সে জন্য সচেতনভাবেই কানে হেডফোন লাগিয়ে নেয় হত্যাকারীরা।

খাশোগির জীবনের বর্বর এই শেষ মুহূর্তগুলোই রেকর্ড হয় তারই হাতঘড়ি অ্যাপল ওয়াচে। কয়েক দিন আগেই এই অডিও রেকর্ডিং হাতে পান তুর্কি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বেনামি কয়েকটি সূত্রের উল্লেখ করে বুধবার মিডলইস্ট আই এ খবর জানিয়েছে।

হত্যার কয়েক দিন পর থেকেই হত্যার একটি অডিও রেকর্ড পাওয়ার দাবি করে আসছে তুর্কি গোয়েন্দারা। ওই অডিও রেকর্ডিং পুরোপুরি শুনেছে এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, ২ অক্টোবর কনস্যুলেটে ঢোকার পর সোজা কনসাল জেনারেলের অফিসে যান খাশোগি। সেখান থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের পড়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।

কক্ষ থেকে আগেই বের হয়ে গিয়েছিলেন কনসাল জেনারেল। বের হওয়ার আগে জেনারেল ভয়ার্ত কণ্ঠে তাদের বলেন, যা করার বাইরে গিয়ে কর। তোমরা আমাকেও বিপদে ফেলছ। এ সময় ওপরে প্রচণ্ড চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন নিচতলায় থাকা এক ব্যক্তি।

কিছুক্ষণ পরই চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ তাকে চেতনানাশক কোনো ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডে ১৫ জনের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সালাহ মোহাম্মদ আল তুবাইগি। তিনি সৌদি আরবের জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগের সৌদি অ্যাসোসিয়েশন অব ফরেনসিক প্যাথলজির সদস্য এবং সৌদি ফেলোশিপ অব ফরেনসিক প্যাথলজির প্রেসিডেন্ট।

ঘটনার দিন সকালেই একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে আঙ্কারা পৌঁছায় দলটি। জিজ্ঞাসাবাদের কোনো উদ্দেশ্য বা চেষ্টাই হত্যাকারীদের ছিল না। হত্যার মিশন নিয়েই তারা এসেছিল।

সূত্রটি বলেছে, ‘খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো আলামত দেখা যায়নি।’ জবাই করার পর দেহ একটি টেবিলের ওপর রেখে কেটে টুকরো টুকরো করেন আল তুবাইগিই। তার হাতে ছিল কাটার একটা করাত। তখনও জীবিত ছিলেন খাশোগি। লাশ কাটা শুরুর আগেই কানে হেডফোন লাগিয়ে নেন তিনি। অন্যদেরকেও কানে হেডফোন লাগানোর নির্দেশ দেন।

আল তুবাইগির এই কথারও রেকর্ডিং রয়েছে। সেখানে আল তুবাইগিকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমি গান শুনছি আর কাজ করছি। তোমাদের এটা করা উচিত।’ তিন মিনিটের এই রেকর্ডিং তুর্কি সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহর হাতে রয়েছে। এটা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই কালো কয়েকটি ব্যাগ নিয়ে কনস্যুলেট থেকে বের হন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যাগগুলোতেই খাসোগির টুকরো টুকরো মাংস।

দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ সৌদি আরব- ট্রাম্প। তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি অনেকেই বলছেন, সৌদি কনস্যুলেটেই খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে হাত রয়েছে সৌদি রাজপরিবারের।

তাদের দিকেই আঙুল তুলেছেন মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন সদস্য। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতেও সেই তথ্য। পশ্চিমা দেশগুলোও এ বিষয়ে জবাব চেয়ে রিয়াদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে। এরপরও সৌদি রাজপরিবারের পক্ষেই সাফাই গাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহমুক্ত ও নির্দোষ (বেনিফিট অব ডাউট) সৌদি আরব।

মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, কী হয়েছে তা-ই প্রথমে বের করা উচিত আমাদের। আবার আমরা এভাবেও দেখতে পারি, তুমি দোষী যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্দোষ প্রমাণিত হও। আমি এটা পছন্দ করি না।’ সাক্ষাৎকারের আগে এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, কনস্যুলেটের ভেতর কী হয়েছে সে বিষয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান কিছু জানেন না বলে তাকে জানিয়েছেন।

খাসোগিকে সৌদি কনস্যুলেটেই হত্যা করা হয়েছে তুর্কি কর্মকর্তাদের এ বক্তব্যের মধ্যে তুরস্ক সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। খাসোগির সঙ্গে আসলে কি ঘটেছে তা জানতে মঙ্গলবার রিয়াদ সফরে যান তিনি।

সেখানে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। রিয়াদ সফর শেষ পম্পেও বলেন, খাসোগি নিখোঁজের সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সৌদি।

এরপর বুধবার আঙ্কারায় যান তিনি। সেখানে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কি কথা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতেই পম্পেওর তুরস্ক সফর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

(জাস্ট নিউজ/এমজে/২০৩০ঘ.)