ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের আহ্বান

অবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন স্থগিত করুন

অবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন স্থগিত করুন

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : অবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা স্থগিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নিরপেক্ষ বেসরকারি আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (সংক্ষেপে ক্রাইসিস গ্রুপ)। যতক্ষণ পর্যন্ত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয় এবং তারা স্বেচ্ছায় ফিরতে না চান ততক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা স্থগিত করতে বাংলাদেশ ও য়িানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও অন্য দেশগুলোর প্রতি।

এতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে, চীনের চাপে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু করতে সম্মত হলেও অনেক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজি নন। ক্রাইসিস গ্রুপ বেশ কিছু রোহিঙ্গার সাক্ষাতকার নিয়েছে। তাতে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেখা গেছে, ফেরত পাঠানোর তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের অনেকে এরই মধ্যে পালিয়েছেন। কমপক্ষে তাদের একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

ক্রাইসিস গ্রুপ আরো বলেছে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হলে তাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে উভয় দেশেই নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে ৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশগুলো হলো :
১. যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে নিশ্চিত করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত। মিয়ানমারকে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

২. এ সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ ও তার আন্তর্জাতিক বেসরকারি এনজিও বিষয়ক অংশীদার, মিডিয়াকে বাধাহীনভাবে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা অত্যাবশ্যকীয় মানবিক সহায়তা করতে পারে। এ ছাড়া তারা যাতে নিরপেক্ষভাবে মাঠ পর্যায়ের অবস্থা জানতে পারে।

৩. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ আরো গভীর করা উচিত বাংলাদেশ সরকার ও তার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের। ভবিষ্যত কি হতে পারে তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। এখন পর্যন্ত এমন কোনো শলাপরামর্শ করা হয় নি অথবা তা করার জন্য কোনো প্রক্রিয়াও নেয়া হয় নি।

৪. চীনের উচিত তাড়াতাড়িগ করে প্রত্যাবর্তন শুরু করানোর জন্য চাপ দেয়া বন্ধ করা। তাদের ও অন্য সরকার, সংগঠনগুলোর উচিত রাখাইনে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনের উপযুক্ততা তৈরি হয় এবং তাদের ফেরত যাওয়া টেকসই হয়।

৫. প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া স্থগিত করতে দুই দেশের ওপর আনুষ্ঠানিকভাবে এবং বেসরকারি উপায়ে প্রভাব ব্যবহার করে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ার জোরালো বিরোধিতা অব্যাহত রাখা উচিত জাতিসংঘ ও এর শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সির। বিশেষ করে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রানার বারগেনারের উচিত প্রকাশ্যে একটি অবস্থান নেয়া এবং ঢাকা ও ন্যাপিডকে চাপ দেয়া, যাতে বর্তমান পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়।

ব্রাসেলসে ১২ নভেম্বর পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করা হয়। তারপর ৮ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি দিয়েছে ক্রাইসিস গ্রুপ। তাতে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠালে কি কি বিপদ বা ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে তাও তুলে ধরা হয়েছে তাতে। বলা হয়েছে, আগামী ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা। প্রথম পর্যায়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের ফেরত যাওয়ার মতো উপযুক্ত পরিস্থিতি নেই। এতে ফেরত যাওয়া প্রক্রিয়াটি স্বেচ্ছাভিত্তিক নয়। এতে শরণার্থীদের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে। এমন উদ্যোগে বাংলাদেশের ভিতরেই নতুন করে সহিংস অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/১১০৫ঘ.)