এরদোগানের দুশমনের যোগসাজশ, আফগানিস্তানে শিক্ষকসহ আটক ৪০

এরদোগানের দুশমনের যোগসাজশ, আফগানিস্তানে শিক্ষকসহ আটক ৪০

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরিফের একটি বিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ছয় তুর্কি শিক্ষকসহ কয়েক ডজন লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সন্দেহভাজন এসব আটকদের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের চিরশত্রু ফেতুল্লাহ গুলেনের সম্পর্ক রয়েছে বলে আঙ্কারা মনে করছে। কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।

আঙ্কারার ভাষায় ফেতুল্লাহ গুলেনের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ শুক্রবার একটি আফগান-তুর্ক স্কুলে এ অভিযান চালানো হয়েছে।

২০১৬ সালে এরদোগানের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ধর্মীয় নেতা গুলেনের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে তুরস্ক।

আটক শিক্ষকদের মধ্যে একজন শুকরাল্লাহ সামাদি বলেন, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ২টায় তাদের বিরুদ্ধে শুরু করেছে পুলিশ।

এতে তুরস্কের ছয় শিক্ষক ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে অন্তত ৪০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শুকরাল্লাহ সামাদি বলেন, গত ২৩ বছর ধরে শিক্ষপ্রতিষ্ঠানটি সফলভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। আফগানিস্তানে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

আফগান-তুর্ক জিএজি এডুকেশন এনজিও (এটিসিই) ১৯৯৫ সাল থেকে দেশটিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজধানী কাবুল, মাজারি-ই-শরিফ, কান্দাহার ও হেরাতসহ বেশ কয়েকটি শহরে স্কুল রয়েছে তাদের।

এটিসিই বলছে, তারা একটি স্বাধীন ফাউন্ডেশন। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের অভ্যুত্থানের সঙ্গে তারা জড়িত ছিল না। এছাড়া আফগানিস্তানে তাদের স্কুলের বেশ সুনামও রয়েছে।

উত্তর আফগানিস্তানে ব্যাপক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছাড়াও বড় ধরনের অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে তুরস্কের। কাজেই এসব এসব স্কুলের দায়িত্ব তুরস্কের হাতে ছেড়ে দিতে প্রচণ্ড চাপ ছিল কাবুল সরকারের ওপর।

গত বছর আফগান সরকার স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে তুরস্ক সরকারের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন ছিল ধীর গতিতে।

গুলেন সংশ্লিষ্ট হিজমত আন্দোলনের একই ধরনের স্কুল বিশ্বজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে। নিজেদের প্রভাব আছে এমন দেশগুলোকে তুরস্ক বলেছে যাতে এসব স্কুলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মারিফ ফাউন্ডেশনের হাতে দেয়া হয়।

শনিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে তুর্কি সরকারের মারিফ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানে গুলেনের ১২টি স্কুলের ছয়টির দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে।

বালখের গভর্নরের মুখপাত্র মুনির আহমেদ ফরহাদ বলেন, স্কুলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পরিবর্তন আনতে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অভিযান চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তুরস্কের মধ্যে চুক্তি অনুসারে স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত এসেছে। বালখের স্থানীয় প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করছে মাত্র।

এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর সন্দেহভাজন বিভিন্ন গুলেন নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চালিয়ে আসছে তুরস্ক সরকার।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭৭ হাজার লোককে কারাগারে আটক করা হয়েছে। এছাড়া সামরিক বাহিনী, সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে দেড় লাখ লোক চাকরিচ্যুত কিংবা বরখাস্ত হয়েছেন।

তবে গুলেন অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার ও নিন্দা জানিয়েছে।