মোদির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলছে: মমতা

মোদির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলছে: মমতা

বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় ২০০৮ সালে ধরনায় বসতে দেখা গিয়েছিল তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে। আর এবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ধরনায় বসলেন মমতা। ধরনার বিষয়টি আলাদা হলেও একটি রাজ্যের সরকারের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে তার এই ধরনায় রীতিমতো উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই’এর কর্মকর্তাদের অভিযানের প্রেক্ষিতেই এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ধরনা শুরু করেন মমতা ব্যনার্জি। কলকাতার ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে খোলা আকাশের নীচেই চেয়ার পেতে মমতার সাথেই ধরনা মঞ্চে রয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিত সুর পুরকায়স্থ। কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমার নিজেও মমতার ধরনা মঞ্চে ছিলেন।

এর আগে পুলিশ কমিশনারের বাসায় সিবিআই কর্মকর্তাদের অভিযানকে কেন্দ্র করে এদিন সন্ধ্যা থেকেই টানটান নাটক শুরু হয়। ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নীকারী সংস্থায় তদন্তের দায়িত্বে থাকা রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তথ্য লোপাটসহ কিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরই তাকে কয়েকবার সমন পাঠানো হয়। কিন্তু কোনোবারই হাজিরা দিতে না যাওয়ায় এদিন সিবিআই-ডিএসপি তথাগত বর্ধনের নেতৃত্বে ৪০ জনের একটি দল পুলিশ কমিশনারের কলকাতার লাউডন স্ট্রীটের বাসায় যায়। এসময় সিবিআই কর্মকর্তাদের সাথে কলকাতা পুলিশের প্রথমে তর্কাতর্কি, ধস্তাধস্তি পরে সিবিআই-এর ডিএসপি তথাগত বর্ধনকে আটক করে শেক্সপীয়ার থানায় নিয়ে যায় কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারা। যদিও কমিশনারের বাসায় অভিযান চালানোর জন্য সিবিআই-এর কর্মকর্তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কোন নথি না থাকার কারণে তাদের আটক করায় হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই অভিযানের খবর পাওয়ার পরই তার বাসায় ছুটে আসেন মমতা ব্যানার্জি। সাথে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিত সুর পুরকায়স্থ সহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সেখানেই অপেক্ষমান গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক সমালোচনা করতে থাকেন মমতা।

তিনি জানান, ‘নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ-দুই পান্ডা মিলে বাংলাকে যেভাবে অত্যাচার করছে, অপমান করছে-যে কায়দায় গিয়ে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ বাংলাতে ক্যু (অভ্যুত্থান) করার চেষ্টা করছে.. যেহেতু আমি ব্রিগেডে বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে মহাজোটের সমাবেশ করেছি তাই এগুলো প্রতিহিংসা বশত করা হয়েছে। ওরা জানে ২০১৯ সালে বিজেপি ফিনিশ, ওরা এক্সপায়ারি হয়ে গেছে। মানুষ ঠিক করবেন কাকে ভোট দেবেন আর কাকে দেবেন না। কিন্তু যেভাবে গায়ের জোরে এই কাজ করছে তা মানা যায় না।’

গত প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরেই কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার কটাক্ষ করে চলেছেন মমতা। কেন্দ্র ও রাজ্যের এই দুই ক্ষমতাসীন দলের পরস্পর বিরোধী সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের জেরে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত রাজ্যের রাজনীতি। মমতার অভিযোগ সিবিআই, ইডি দিয়ে কেন্দ্র প্রতিহিংসার রাজনীতি চালাচ্ছে। এদিনও সেই একই অভিযোগ করলেন মমতা।

মমতা বলেন, ‘গদ্দার (মুকুল রায়) আর ডাকাত (কৈলাশ বিজয়বর্গীয়)-এর কথায় নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ যারা সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা করে..আজ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এরা খালি সিবিআইকে নির্দেশ দেয়। এই প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগে। এরা শুধু মিথ্যা কথা বলে।’

এসময় কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে ধরনার ঘোষণা দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমি দেশের সংবিধান, দেশের প্রতিষ্ঠান, গণতন্ত্র, সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে রক্ষার দাবিতে এই ধরনায় বসছি। যতক্ষণ না এর সমাধান হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধরনা চলবে। আমি চাই সংবিধান তার নিজের মতো চলুক, আমি খুবই দুঃখিত ও মর্মাহত যে দেশে এখন জরুরি অবস্থার চেয়েও খারাপ অবস্থা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগে সকলকে জব্দ ও স্তব্ধ করার জন্য যে ষড়যন্ত্র চলছে-তা মানা যায় না। সকলে ভয় পেলেও আমি বাংলার মাটিকে ভয় পাই না। গান্ধীজির কথায় এই ধরনা হল সত্যাগ্রহ।’

রাজীব কুমারকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কলকাতা পুলিশ কমিশনার হলেন বিশ্বের সেরা পুলিশ কর্মকর্তা। আমি একটা প্রশাসন চালাই। সেই প্রশাসনের একজনকে রক্ষা করা, নিরাপত্তা দেওয়া আমার সরকারের দায়িত্ব। আর সেই কারণেই এখানে এসেছি। এটা না করলে এদের সাহস আরও বেড়ে যাবে। হয়তো আগামীকাল মুখ্যসচিবের বাসায় যাবে পরদিন হয়তো স্বরাষ্ট্র সচিবের বাসায় যাবে।’

আগামীকালই রাজ্যে বাজেট ঘোষণা হবে। বাজেট পেশের আগে ক্যাবিনেট বৈঠক আবশ্যিক। সেক্ষেত্রে ধরনা মঞ্চের পাশেই একটি অস্থায়ী ঘর তৈরি করে সেখানে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে বলেও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকদের মুখোমুখির পর্ব শেষে ফিরহাদকে সাথে নিয়েই চলে আসেন মেট্রো চ্যানেলে। শুরু হয় ধরনা পর্ব।

এমজে/