যুবরাজের হাতে পরমাণু প্রযুক্তি হস্তান্তরে ট্রাম্প বেপরোয়া কেন?

যুবরাজের হাতে পরমাণু প্রযুক্তি হস্তান্তরে ট্রাম্প বেপরোয়া কেন?

 

দেশে ও বিদেশে বিরোধীদের ওপর বেপরোয়া দমন-পীড়নের বড় ধরনের রেকর্ড গড়েছেন সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমান। এছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের ঘোষণা অন্তত একবার হলেও দিয়েছিলেন তিনি।

বিষয়টি মাথায় রেখে বোমা বানানো হবে না বলে পুরাদস্তুর লৌহকঠিন নিশ্চয়তা না পেলে তার সরকারকে যেকোনো পরমাণু প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটাই স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এসব কিছু বিবেচনায় না নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি প্রস্তাবে সাড়া দিতে নাছোড়বান্দার মতো অটল আছে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও লবিংকারীরা স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় এমনটা ঘটতে যাচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নজরদারি ও সংস্কার কমিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে জানা গেছে, সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা একটি মার্কিন কোম্পানির জন্য খুব তাড়াহুড়ো করেই সৌদি আরবের কাছে পরমাণু বিদ্যুৎ চুল্লি বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরের দুই মাসেই এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। প্রযুক্তি হস্তান্তরের আইন লঙ্ঘন হবে বলে হুশিয়ারি করা হলেও তারা দমে যেতে চাননি। সব সতর্কতা ও আইনকে পাশ কাটিয়ে একটি কোম্পানির তৈরি করা ছক নিয়েই তারা এগোতে চাচ্ছিলেন।

সংঘবদ্ধ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল সেই কোম্পানিটির প্রতিনিধিত্ব করছে। কমিটির প্রতিবেদন বলছে, মাইকেল ফিন নিজেকে কোম্পানির একজন উপদেষ্টা হিসেবে শনাক্ত করেন।

সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তিটির তত্ত্বাবধান করতে নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু টম ব্যারাককে নিয়োগ দিতে ট্রাম্পের কাছে অনুরোধ করেন। যদিও তার ব্যক্তিগত ব্যবসা সৌদি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য তহবিল সংগ্রহ করতে পেরেছে। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপকে মুলতবি করে রাখেন এইচ. আর. ম্যাকমাস্টার।

তিনি মাইকেল ফিনের স্থলাভিষিক্ত হন। জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরির তত্ত্বাবধানে রিয়াদের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলছে। সৌদি আরবের কাছে বিদ্যুৎ চুল্লি বিক্রি করতে গত সপ্তাহে ওভাল অফিসে একটি পরমাণু কোম্পানির নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এর আগে মাইকেল ফিনকে যে কোম্পানিটি সহযোগিতা করেছিল, সর্বশেষ এ বৈঠকেরও আয়োজক ছিল তারা। তবে স্বার্থের সংঘাতের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ওয়েসটিংহাউস নামের পারমাণবিক কোম্পানিটির স্বত্বাধিকারী যে ফার্মটি, সেটি ম্যানহাটনের গগণচুম্বী অট্টালিকার মালিক জারেড কুশনারের পরিবারিক কোম্পানির একটি শেয়ার কিনেছে। মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করতে জারেড কুশনার আগামী সপ্তাহে ফের রিয়াদে যাবেন।

সৌদির কাছে পারমাণবিক চুল্লি বিক্রি করতে মার্কিন কোম্পানির জন্য যুক্তিও দাঁড় করানো হয়েছে। তা হল, সৌদি যদি পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করতে চায়, তবে চীন কিংবা রাশিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির কাছ থেকে নেয়ায়ই ভালো হবে।

কিন্তু এ যুক্তি একমাত্র তখনই খাটবে যখন প্রযুক্তির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের শর্তে রিয়াদের সঙ্গে একটি চুক্তির জন্য আলোচনায় বসবে মার্কিন প্রশাসন।

সৌদি আরবের ক্ষেত্রে সবেচেয়ে দায়িত্বশীল চুক্তি হবে, দেশটি যাতে যেকোনো ইউরেনিয়া সমৃদ্ধ করতে না পারে কিংবা খরচ করা জ্বালানি যাতে নতুন করে প্রক্রিয়াজাত করতে না পারে। পরমাণু অস্ত্র বানাতে এই প্রক্রিয়া অবলম্বর করা হয়। তবে এতে বিস্মীত হওয়ার মতো কিছু নেই যে উদ্ধত যুবরাজ এসব শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।

সম্ভবত তিনি পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের সুযোগটি জিইয়ে রাখতে চান। যদিও মার্কিন কেন্দ্রীয় আইনে পরমাণু প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্তের প্রটোকল নিয়ে আলোচনা করতে হয়। পরে তা কংগ্রেসে উপস্থাপন করতে হবে।

কাজেই কংগ্রেসকে অবশ্যই জোর দিতে হবে যে সৌদি আরবের সঙ্গে যেকোনো পরমাণু চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান যেনো রক্ষা করা হয়। নতুবা তা মোহাম্মদ বিন সালমানের হাতে পড়লে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এমজে/