জম্মু-কাশ্মিরের জনাকীর্ণ বাস স্ট্যান্ডে গ্রেনেড হামলা

জম্মু-কাশ্মিরের জনাকীর্ণ বাস স্ট্যান্ডে গ্রেনেড হামলা

 

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে যে কোনও জঙ্গি হামলায় সাধারণত সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়ে থাকে। তবে প্রচলিত ধারার বাইরে এসে এবার একটি জনাকীর্ণ এলাকায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে।

ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে (৭ মার্চ) সীমান্তবর্তী শহর জম্মুর মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা এক বাসস্ট্যান্ডে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছে। বাসের নিচে পেতে রাখা গ্রেনেডে অন্তত ২৬ জন আহত হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আহতরা সবাই বাসের চালক ও সহকারী। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২ মাস আগেও জম্মুর অন্য এক বাসস্ট্যান্ডে একই রকমের একটি হামলা পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কারিগরি ত্রুটির কারণে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়নি সন্ত্রাসীরা। বিশ্লেষকরা যদিও মনে করেন, সামরিক বলপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে ভারত কাশ্মির সংকটের সমাধান করতে পারবে না, তবু ক্রমশ সামরিক তৎপরতায় কঠোরতা এনেই বিবাদমান সমস্যার সমাধান করতে চাইছে দিল্লি। তবে জঙ্গি হামলা থামছে না।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে সে দেশের আধাসামরিক বাহিনীর ওপর জইশ-ই-মোহাম্মদের স্বঘোষিত আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হলে এই পর্যায়ের ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা শুরু হয়। হামলায় রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের মাটিতে বিমান হামলা চালায় ভারত। এরপর থেকেই দুই দেশের সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে উঠে আসছে পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা ও একে অন্যের হামলা প্রতিহত করার খবর। দুই দেশই একে অপরকে শাসাচ্ছে নিজেদের হাতে থাকা শতাধিক পারমাণবিক অস্ত্রের ইঙ্গিত সামনে এনে। ভারতের দাবি, পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ভারতের মাটিতে জঙ্গি তৎপরতা চলছে। তবে পাকিস্তান তা অস্বীকার করে আসছে। এরইমধ্যে আবারও কাশ্মির জঙ্গি হামলার কবলে পড়লো।

বৃহস্পতিবারের গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গে ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, একটি বাসের নিচে রাখা গ্রেনেডে বিস্ফোরণে মানুষ হতাহত হয়। তবে বিস্ফোরণের সময়ে বাসের অভ্যন্তরে যাত্রী ছিলো কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এক পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পুলিশ সব ধরনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা হামলাকারীদের ধরে ফেলবো’।

এনডিটিভির ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলের সম্প্রচারিত ছবিতে বিস্ফোরণস্থলে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় বাসিন্দা জড়ো হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থল ঘিরে রাখতে দেখা গেছে। প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করে বাসস্ট্যান্ডে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘ভেবেছিলাম টায়ার বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে বিস্ফোরণ ছিলো প্রচন্ড। স্থানীয়রা অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায়’।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়; পুলওয়ামা হামলার মূল হোতা আদিল আহমেদ দার পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় ভারতকে সমর্থন করতেন। কদিন আগেও তিনি ছিলেন সুফি ধারার অনুসারী। আচমকা সেই মানুষটিই পরিচিত হয়ে উঠলেন জঙ্গি হিসেবে। গত বছর একইভাবে নিজের চিন্তাধারায় রূপান্তর এনেছিলেন কাশ্মিরি একজন অধ্যাপক। সমাজবিজ্ঞানের সেই মেধাবী শিক্ষার্থী একসময় কার্ল মার্ক্সের বস্তুবাদী তত্ত্বে শনাক্তকৃত ধর্মের অবস্থান নিয়ে আলোচনামুখর থাকলেও সামিল হয়েছিলেন সশস্ত্রপন্থী হিজবুল মুজাহিদীনের পতাকাতলে। গত বছর মে মাসে তিনি ‘শহীদ’ হন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ব্যাপক মাত্রায় সামরিকায়ন, নিরাপত্তা তল্লাসির সূত্রে হওয়া নির্বিচার হয়রানি ও স্বশাসনের অধিকার ক্ষুণ্ন করার মতো বিষয়গুলো স্থানীয়দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ জাগিয়ে তুলছে। তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর দিকে।

দুই মাস আগে জম্মুর মূল বাসস্ট্যান্ডে একই ধরনের একটি বিস্ফোরণ হয়েছিল। তবে সেই গ্রেনেড লক্ষ্যচ্যুত হয় এবং বাতাসে বিস্ফোরিত হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি।

এমজে/