বৃটিশ সরকার ও জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ

আইএস বধু শামীমার বিচার দাবি পিতা আহমেদ আলীর

আইএস বধু শামীমার বিচার দাবি পিতা আহমেদ আলীর

জঙ্গি গ্রুপ আইএসের বধু বলে পরিচিত শামীমা বেগমের ওই গ্রুপে যোগ দেয়ার জন্য বৃটিশ জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তার পিতা আহমেদ আলী (৬০)। তিনি বৃটেনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন শামীমাকে দেশে ফেরার অনুমতি দেয়ার জন্য। তবে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন নি। তিনি শামীমাকে বৃটেনে ফেরার সুযোগ দিয়ে তার বিচার দাবি করেছেন। সিলেটের সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বাড়ি আহমেদ আলীর। সেখানে নিজের বাড়ি থেকে তিনি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন। তার সাক্ষাতকার নিতে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসেন সাংবাদিক ইথিরাজন আনবারাসান।

গত বৃহস্পতিবার নিউমোনিয়ায় সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে মারা যায় শামীমা বেগমের সদ্যজাত ছেলে জেরাহ। এ খবর বাংলাদেশে পৌঁছানোর আগে ওই সাক্ষাতকার নেয়া হয়।

আহমেদ আলী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, শামীমা লন্ডন থেকে ১৫ বছর বয়সে সিরিয়া গিয়েছে। সে বুঝেই করুক বা না বুঝে করুক এটা তার অন্যায় হয়েছে। তবে তাকে বৃটেনে ফিরতে দেয়া উচিত, যাতে সেখানে সে বিচারের মুখোমুখি হতে পারে।

উল্লেখ্য, আহমেদ আলীর কন্যা শামীমা বৃটিশ নাগরিক। তার দাবি অনুযায়ী, তিনি কখনো বাংলাদেশে আসেন নি। এমন কি তার কাছে কোনো বাংলাদেশী পাসপোর্টও নেই। তিনি বাংলাদেশী নাগরিক নন। শামীমা ফেব্রুয়ারিতে সন্তানসম্ভাবা অবস্থায় বৃটেনে ফেরার আকুতি জানান। এ নিয়ে বৃটেনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ তার নাগরিকত্ব বাতিল করেন।

এরপর তাকে দ্বৈত নাগরিকত্বের অধীনে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়। এর কড়া জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, শামীমাকে কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জন্ম নেয়ার তিন সপ্তাহ পরে গত বৃহস্পতিবার মারা যায় শামীমার ছেলে জেরাহ। এ নিয়ে বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা শুরু হয়েছে বৃটেনেই। এমন কি সরকারের ভিতরকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলকে ‘অমানবিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

জেরাহ’র মৃত্যু সংবাদ তখনও আহমেদ আলী পান নি। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, শামীমা ভুল করেছে। তার পিতা হিসেবে সবার কাছে, বৃটিশ জনগণের কাছে আমি ক্ষমা চাই। শামীমা যা করেছে তার জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি বৃটিশ জনগণের কাছে অনুরোধ করি, দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দিন।

আহমেদ আলী দাবি করেন, শামীমা যখন সিরিয়ায় যায় তখন সে ছিল একটি শিশু। তার ভাষায়, ওই সময়ে তার বয়স ছিল অনেক কম। কি করছে সে বিষয়ে হয়তো সে বুঝতে পারে নি। আমার মনে হয়, তাকে একাজ (আইএসে যোগ দিতে) করতে অন্য কেউ উৎসাহিত করেছিল।

তাই তিনি বৃটিশ সরকার ও জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। বলেছেন, শামীমাকে দেশে ফিরতে দিন। সে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে তাকে শাস্তি দিন।
মেয়ে শামীমা উগ্রবাদী হয়ে উঠছে এটা কি তিনি জানতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আহমেদ আলী বলেছেন, তার এ বিষয়ে কোন ধারণা ছিল না।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশেই থাকছেন আহমেদ আলী। মাঝে মাঝেই লন্ডনে যান দুই থেকে চার সপ্তাহের জন্য। তার ভাষায়, সেখানে এর চেয়ে বেশি সময় থাকি না। শামীমা সম্পর্কে শেষের দিকের অনেক কিছুই জানি না। যখন তার সঙ্গে ছিলাম তখন সে যে সিরিয়া যাচ্ছে বা আইএসে যোগ দিচ্ছে এমন কোনো আচরণ তার মধ্যে আমি দেখতে পাই নি।

ইথিরাজন আনবারাসান লিখেছেন, আমরা লন্ডন থেকে তার সঙ্গে কথা বলতে এতটা পথ এসেছি এটা জেনে আহমেদ আলী বিস্মিত হয়েছেন। তাকে অনেকটা ভগ্নদশা, উদ্বিগ্ন ও হতাশ লাগছিল। ইংলিশের পরিবর্তে তিনি মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলাটাই পছন্দ করলেন। এ সময় তার মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে তাকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন শোনালো। শামীমা কিভাবে উগ্রবাদে দীক্ষা পেয়েছে তা তিনি ব্যাখ্যা করতে পারলেন না। তবে একই সময়ে তিনি প্রশ্ন রাখলেন। বললেন, অন্যের পাসপোর্ট ব্যবহার করে কিভাবে তাকে (শামীমা) সিরিয়া সফরে অনুমোদন দিয়েছে বৃটিশ অভিবাসন বিভাগ?

লন্ডন থেকে অনেক দূরে, মিডিয়া থেকে অনেক দূরে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ছবির মতো গ্রামে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে শান্তিতে জীবনযাপন করছেন আহমেদ আলী। তার বাড়ির চারপাশে নারকেল গাছ। আম গাছ। আর আছে সবুজ ধানের ক্ষেত।

এমজে/