নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা

বিশ্বব্যাপি ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়

বিশ্বব্যাপি ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলার শোকে স্তব্দ, নির্বাক পুরো বিশ্ব। মসজিদে নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর লোমহর্ষক সন্ত্রাসী হামলার এ ঘটনায় ক্ষোভ, নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। স্বজনহারাদের জন্য শোক-সমবেদনা আর হামলার নিন্দায় এক কাতারে সামিল পুরো বিশ্বের সাধারণ মানুষেরা।

হামলার ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, "নিউজিল্যান্ডের মসজিদে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা রইলো।কান্ডজ্ঞানহীন এ ঘটনায় ৪৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে আর আহত হয়েছে অনেকেই।আমাদের জায়গা থেকে আমরা নিউজিল্যান্ডের পাশে দাঁড়াবো। প্রভু সবার মঙ্গল করুন।"

হামলার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস।

জাতিসংঘ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মহাসচিব নিউজিল্যান্ডের মসজিদে নিহতদের স্বজন এবং আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি মুসলমানদের এই পবিত্র দিনে সবাইকে ইসলামিক কমিউনিটির সঙ্গে একাত্মতা প্রদর্শনের আহবান জানিয়েছেন।

সন্ত্রাসীর হামলার ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, "ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের মানুষদের প্রতি যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা এধরনের জঘণ্য সহিংসতার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা।"

রাজকীয় এক বিবৃতিতে হামলার ঘটনাটিকে গভীর মর্মবেদনার বলে মন্তব্য করেছেন রানী এলিজাবেথ।

সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা প্রকাশ করে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, "এই বিপদের সময় নিউজিল্যান্ডের পাশেই রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আজকের এই ঘটনায় শান্তি এবং নম্রতা চুরি হয়েছে ঘৃণা এবং সহিংসতার দ্বারা।"

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান একে বর্ণবাদী ও মৌলবাদী হামলা বলে উল্লেখ করেছেন। প্রেসিডেন্টের বিশেষ মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন টুইটারে লিখেছেন, ‌"এই হামলা প্রমাণ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। এর আগেও আমরা দেখেছি ইসলামভীতি কেমন বিকৃত ও খুনে মানসিকতার জন্ম দেয়। এ ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। ইসলামবিরোধী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।"

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেন, "গুলিবর্ষণের ঘটনায় ইন্দোনেশিয়া তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। বিশেষ করে ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে, যখন জুমার নামাজ আদায় করছিলেন সবাই।"

টুইটারে শোক বার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

মালয়েশিয়া জানায়, হামলায় তাদের দুজন নাগরিক আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন ফিজির বাসিন্দা বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম ঘটনাটিকে বিশ্বশান্তি ও মানবতার ওপর এক কালো ছায়া হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, "বর্বর এই হামলার কথা জানতে পেরে আমি বেদনাহত, যে ঘটনা মানবিক মূল্যবোধের বিরোধী ও সাধারণ মানুষের প্রাণ নিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষ ও আক্রান্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি।"

জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, "জঘণ্য এই হত্যাকান্ড একধরণের ভয়ংকর সন্ত্রাস। এটি আমাদের চরমপন্থা, ঘৃণা আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক করে দেয়, এগুলোর কোনো ধর্ম নেই।"

হামলাকে চরমপন্থা বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে লেবানন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবরান বাসিল বলেন, "এ ধরণের হামলা আমাদের সম্প্রদায়কে একটা বড় ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এরকম হামলা অব্যাহত থাকলে তা যুদ্ধকে বিকল্প হিসেবে সামনে নিয়ে আসবে।"

ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লাইড জাঙ্কার এক বিবৃতিতে বলেন, "হামলায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের এবং পুরো সম্প্রদায়ের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আক্রান্তদের স্বজন পরিবারের শক্তি এবং সাহস কামনা করছি।"

ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো বলেন, "নিউজিল্যান্ডের মসজিদে এরকম ঘৃণ্য সন্ত্রাসের নিন্দা জানাই।"

সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে ওআইসি। সংস্থাটি বলেছে, "এ সন্ত্রাসী হামলা ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা এবং ইসলামোফােবিয়ার এক আগাম বিপদ সংকেত।" সংস্থাটির হাসচিব ইউসেফ আল-ওথাইমিন মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে নিউজিল্যান্ড সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় এক বন্দুকধারী। এ সময় বন্দুকধারীর ব্রাশ ফায়ারে ৩ বাংলাদেশিসহ নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৯ জন, আহত হয়েছেন ৪৮ জন। ইতিমধ্যেই সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে ১ নারীসহ ৪ জনকে।

এদিকে হামলাকারীর কাছে একটি বড় বন্দুক ও কয়েকশ রাউন্ড গুলি ছিলো।

 

নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সময় শুক্রবার দেড়টার দিকে মসজিদে হামলার ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভও করেন অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ২৮ বছর বয়সী ওই শ্বেতাঙ্গ হামলাকারী। ক্রাইস্টচার্চে ভিডিওটি অনলাইনে না ছড়াতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে পুলিশ।

জিএস/