ভেস্তে গেছে ব্রেক্সিটের সব বিকল্প প্রস্তাব

ভেস্তে গেছে ব্রেক্সিটের সব বিকল্প প্রস্তাব

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসা ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে সম্ভাব্য বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা।

পার্লামেন্টে ১৬টি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও স্পিকার এর মধ্যে আটটি প্রস্তাব বেছে নিয়েছিলেন।

বিতর্কের পর আইনপ্রণেতাদের প্রত্যেকের সামনে আটটি বিকল্প প্রস্তাবসংক্রান্ত কাগজ তুলে দেয়া হয়।

এর মধ্যে যেসব প্রস্তাবে তাদের সম্মতি থাকবে, সেগুলোকে তারা ‘হ্যাঁ’, আর যেসবে আপত্তি থাকবে সেগুলোকে ‘না’ হিসেবে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত বিকল্প সেই আটটি প্রস্তাবের সবই না হিসেবে চিহ্নিত করেন তারা।

প্রস্তাবগুলো হলো- কাস্টমস ইউনিয়ন, নিশ্চিত গণভোট, ১২ এপ্রিল চুক্তিহীনভাবে বেক্সিট বাস্তবায়ন, একক বাজার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব, ইএফটিএ এবং ইইএ সদস্যপদ, চুক্তিহীনতা এড়াতে অনুচ্ছেদ বাতিল করা, লেবার পার্টির প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা ও মল্টহাউস প্ল্যান-বি।

ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দুই দফায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সই করা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তি।

এ চুক্তি নিয়ে নিজ দল রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্যদেরও বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন তিনি।

এদিকে ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থনের বিনিময়ে পদ ছাড়তে রাজি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কছেদের পথরেখা তৈরির পরিকল্পনায় পার্লামেন্টে দুই দফা ভোটে হারের পর তৃতীয় দফা ভোটের আগে বুধবার রক্ষণশীল দলের এমপিদের এক বৈঠকে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।

তবে কবে ও কখন পদত্যাগ করবেন তা তিনি বলেননি। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন যদি আইনপ্রণেতারা তার ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেন।

তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পার্লামেন্টে চুক্তি পাস হলেই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি। ব্রেক্সিট আলোচনার পরবর্তী ধাপে তিনি অংশ নেবেন না।

এ ঘোষণায় তার নিজের দলের এমপিরাই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। যে কোনো মূল্যে তেরেসা মে যে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করতে বদ্ধপরিকর ও কৌশলী- এ শর্তের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশ পেয়েছে।

ব্রেক্সিট প্রশ্নে তেরেসার সম্পাদিত চুক্তিতে সমর্থন পেতে তাকে পদত্যাগ করতে হবে বলে আগেই দাবি জানিয়েছিলেন এমপিরা। ইউরোপঘেঁষা জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই তাকে পদত্যাগের সময়সীমা জানানোর ব্যাপারে চাপ দিচ্ছিলেন।

এ ছাড়া আগের দিনই ব্রেক্সিট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইনপ্রণেতারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয়। যার মধ্য দিয়ে কার্যত ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ এমপিদের হাতে চলে যায়। ব্রেক্সিটপন্থী ক্ষুব্ধ মন্ত্রীদের ব্যাপক চাপের মুখে তেরেসা স্বীকার করে নেন, নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়ার সময় হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার পদ ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। কারণ এ মুহূর্তে এটিই আমার দেশ ও দলের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে এ কক্ষে বসা সবাইকে আমার ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ব্রিটিশ জনগণের সিদ্ধান্ত মতো যাতে আমরা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে পারি।’

২০১৬ সালের জুনে গণভোটে ব্রেক্সিট সিদ্ধান্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত তেরেসার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন ৩৯ জন। গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় হলে পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

এর পর ক্ষমতায় বসেন তারই দলের তেরেসা মে। টানা প্রায় ১৮ মাসের দর কষাকষির পর একটি চুক্তি দাঁড় করান তিনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দুই দফায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ইইউর সঙ্গে স্বাক্ষরিত ওই ব্রেক্সিট চুক্তি।

লেবার নেতা জেরেমি করবিন বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে আরেকটি গণভোট চাইবেন বলে জানা গেছে।

এমজে/