ইরানের চারপাশে বজ্রক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের

ইরানের চারপাশে বজ্রক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আটঘাট বেঁধে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মাঠে নামাচ্ছে নানা রণকৌশল। তারই ধারাবাহিকতায় দেশটির পুরো ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ধ্বংসে সামনে এনেছে ভয়াবহ নতুন অস্ত্র।

অত্যাধুনিক ও অতি শক্তিশালী অস্ত্রের নাম বজ ক্ষেপণাস্ত্র (ইলেকট্রম্যাগনেটিক পালস বা ইমএমপি মিসাইল)। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের চার পাশে নিজেদের ঘাঁটিগুলোতে এ ধরনের ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে মার্কিন বিমানবাহিনী।

মোতায়েন করা হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার চার পাশেও। এ অস্ত্র দিয়ে কোনো প্রাণহানি ছাড়াই সামরিক সক্ষমতাও ধ্বংস ও অকেজো করে দেয়া সম্ভব বলে দাবি করছে মার্কিন সামরিক কর্তারা।

তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের নতুন করে যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স। ইএমপি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ‘কাউন্টার-ইলেকট্রনিকস হাই পাওয়ার মাইক্রোওয়েভ অ্যাডভান্সড মিসাইল প্রোজেক্ট’ (সিএইচএএমপি বা চ্যাম্প) নামের ক্ষেপণাস্ত্রটি মার্কিন বিমানবাহিনীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রস্তুত করেছে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং’র ‘ফ্যান্টম ওয়ার্কস ফর দ্য ইউএস এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি’। এখন থেকে সাত বছর আগে ২০১২ সালেই এর সফল পরীক্ষা চালানো হয়। তবে এর ব্যবহার করেছে কিনা সে ব্যাপারে নানা মত ও জল্পনা রয়েছে।

অনেকেই বলে থাকেন নানা সময় এই অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে। তবে মার্কিন সামরিক কর্তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত কোথাও এর ব্যবহার হয়নি।

ইএমপি রশ্মি ছুড়তে মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার করা হয় ইলেকট্রন শক্তির প্রবল চাপ তৈরি করতে অতি শক্তিশালী মাইক্রোওয়েভ ওভেন।

এই শক্তি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে, চুম্বকীয় ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ ও বৈদ্যুতিক পরিচালনরূপে অতিক্রম করতে পারে। এটা অনেকটা লেজার রশ্মি বা বজ পাতের মতো। একই সময়ে লাখ লাখ বজ পাত হলে যে আলোকরশ্মি সৃষ্টি হয়, ইএমপির একটি আঘাত তার থেকে বেশি রশ্মি সৃষ্টি করতে পারে।

বজ পাত যেমন অবকাঠামো থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক যন্ত্র, রাডার-বিমান প্রভৃতি নষ্ট করে দিতে পারে, একইভাবে ইএমপি রশ্মিও এসব বস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় বি-৫২ স্টিথ বোমারু বিমান থেকে। রিমোট নিয়ন্ত্রিত ও নির্ধারিত লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক সদর দফতরে বসেই টার্গেট নজরদারি করা হবে। পাল্লা ৭০০ কিলোমিটার। অনতি উচ্চতা দিয়ে উড়ে গিয়ে আঘাত হানতে পারবে।

বহুতল কোনো ভবন লক্ষ্যে আঘাত হানলে এর ভেতরের সব ইলেট্রনিক যন্ত্র অকার্যকর হয়ে যাবে। এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরির ইএমপি ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের প্রধান মারি লো রবিনসন জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এখন লক্ষ্যে আঘাত হানতে প্রস্তুত। রাশিয়া এবং এশিয়ার উদীয়মান শক্তি চীন ও ভারতের হাতেও এ অস্ত্র আছে। অস্ত্র তৈরি করছে মার্কিন মিত্র যুক্তরাজ্যও। তবে তারা একদম প্রথম দিকে রয়েছে। উত্তর কোরিয়া ও ইরানেরও এ অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে রবিনসন বলছেন, ইরান এ অস্ত্র মোকাবেলা করতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইএমপি ক্ষেপণাস্ত্রের মতো তড়িতশক্তি মোকাবেলা করার একমাত্র উপায় বহনকারী বি-৫২টি বোমারু বিমানকে আগেই ধ্বংস করে দেয়া। এর জন্য প্রয়োজন রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০-এর মতো অস্ত্র। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইরানি সামরিক বাহিনীর হাতে এই অস্ত্র নেই।

এদিকে ‘আমেরিকার উচিত ইরানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো।’ মধ্যপ্রাচ্যে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার উত্তেজনার মধ্যে সৌদির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পত্রিকা এমন উসকানি দিয়েছে।

শুক্রবার ইংরেজি ভাষায় একটি উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে আরব নিউজ। এতে গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ বন্দরে দুটি সৌদি তেল ট্যাংকারে হামলার দায় কোনো প্রমাণ ছাড়াই সরাসরি তেহরানের ওপর চাপানো হয়েছে। এ ছাড়া সৌদির একটি তেলের পাইপলাইনে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হামলার দায়ও চাপানো হয়েছে।

এরপর বলা হয়েছে, সৌদি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইরানের সার্জিক্যাল হামলা করা। মধ্যপ্রাচ্যে ‘মার্কিন স্বার্থ ও মিত্রদের জন্য ইরানকে ক্রমবর্ধমান হুমকি’ দাবি করে সামরিক সমাবেশ করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে মার্কিন মিত্র সৌদি আরব ও ইসরাইল।

এবার আরও একধাপ এগিয়ে রিয়াদ দেশটির ওপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাতে আহ্বান জানাল। সৌদি রাজপরিবার ঘনিষ্ঠদের পরিচালিত আরব নিউজ বলেছে, ইতিমধ্যে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

রাজধানী রিয়াদ থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটি জানায়, মঙ্গলবার দুটি তেল পাম্পে সশস্ত্র ড্রোন হামলা ও তার দু’দিন আগে আরব আমিরাত উপকূলে তেল ট্যাংকারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে ইরান ও দেশটির ছায়াবাহিনী মারাত্মক উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

এ ব্যাপারে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া উচিত। আরও বলা হয়েছে, কেবল সৌদি আরবেই নয়, পুরো অঞ্চল কিংবা বিশ্বের জন্য ইরানের হুমকির বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের বারবার সতর্ক করে আসছে রিয়াদ।

এমজে/