মুক্তি পাবে সৌদির সেই কিশোর!

মুক্তি পাবে সৌদির সেই কিশোর!

আরব বসন্তে র‌্যালিতে নেতৃত্ব দিয়ে ১৩ বছর বয়সে আটক মুর্তজা কুরেইরিসকে দেয়া মৃত্যুদন্ড বাতিল করেছে সৌদি আরব। ২০২২ সালেই তাঁকে মুক্তি দেয়া হতে পারে।গতকাল শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদি আরবের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, মুর্তজা কুরেইরিসকে মৃত্যুন্ড দেওয়া হচ্ছে না। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁর (মুর্তজা) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে না।’

এর আগে আরব বসন্তের র‌্যালির নেতৃত্ব দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় মুর্তজা কুরেইরিসকে। তাঁর মুক্তির জন্য সৌদি আরবের প্রতি অনুরোধ জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। কয়েকটি দেশের সরকারও মৃত্যুদন্ড না দিতে সৌদির প্রতি অনুরোধ জানায়। এরই মধ্য দেশটির এক কর্মকর্তা বললেন মুর্তজা কুরেইরিসের ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে না।

আরব বসন্তের এক র‌্যালির নেতৃত্ব দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে মৃত্যুদন্ডের সাজাপ্রাপ্ত মুর্তজা কুরেইরিস বর্তমানে সৌদি কারাগারে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে আছেন। তাঁর ফাঁসি কার্যকর হলে সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী কারও মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো।
২০১১ সালে আরব বসন্তে উত্তাল কয়েকটি দেশ।

সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের দাবিতে ওই সময় দেশজুড়ে বিক্ষোভের সূচনা হয়। এরই অংশ হিসেবে মুর্তজা কুরেইরিস বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল নিয়ে রাজপথে নামে। ৩০ জন বন্ধুর দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিল মুর্তাজা কুরেইরিস। সে চিৎকার করে বলছে, ‘সৌদিতে সবাই মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত দেখতে চায়।’
মুর্তজা কুরেইরিসের দুঃসাহস সৌদি কর্তৃপক্ষের নজর এড়ায়নি। সে সময় সৌদি সরকার অল্প বয়সী বালকদের জড়ো হওয়ার এ বিষয়টি ‘পর্যবেক্ষণ’ করে। ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তিন বছর পর মুর্তজাকে গ্রেপ্তার করে সৌদি পুলিশ। তখন মুর্তজার বয়স ছিল ১৩। ৫ বছর ধরে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে তাঁকে। মুর্তজা কুরেইরিসের বাড়ি সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে। আরব বসন্তের র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর।

২০১১ সালে ‘আরব বসন্তর উত্তাল সময়ে সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র দাবিতে গণবিক্ষোভকালে কুরেইরিস মাত্র ১০ বছর বয়সে তার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সাইকেল রাইডে নেমেছিল। ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তিন বছর পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মুর্তাজাকে ১৩ বছর বয়সে গ্রেফতার করে রাজতন্ত্রের বাহিনী। সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে মুর্তাজাকে নিক্ষেপ করা হয় কারাগারে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়, সৌদি আরবে ‘অপরাধের দায়’ দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমার বিষয়টি অস্পষ্ট হলেও সেখানকার রাজতন্ত্র বলে আসছিল এ বয়সসীমা ১২ বছর মানা হয়। এমনকি ‘দায়’ দেওয়ার বয়সের আগে কেউ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাজা দেওয়া হয় না। অথচ মুর্তাজার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগপত্র অনুসারে ‘অপরাধ সংঘঠিত করার সময়’ তার বয়স ছিল ১০ বছর। এমনকি মৃত্যুদন্ড চেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় মুর্তাজার ১৮ বছর বয়সে পদার্পণের কয়েক মাস আগে।

এ নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে সৌদির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তোলে। অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায় মুর্তাজাকে। এমনকি রিয়াদ কর্তৃপক্ষ মুর্তাজার মৃত্যুদন্ড বাতিল না করলে অস্ট্রিয়ায় সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত একটি ধর্মীয় আলোচনা কেন্দ্রও বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় ভিয়েনা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সৌদি সরকারের ওই কর্মকর্তা বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুর্তাজার বিষয়ে সেখানকার সরকারের বর্তমান অবস্থানের কথা জানান।

রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানায়, মুর্তাজাকে প্রাথমিকভাবে যে ১২ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল, তা তার গ্রেফতারের সময় থেকেই হিসাবে ধরা হচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধায় তার ৪ বছরের কারাদন্ড কমে যায়। সে হিসাবে তার কারাদন্ড বাকি থাকে ৮ বছর। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হওয়ায় এই ৮ বছর পূর্ণ হবে ২০২২ সালে। তখনই তার মুক্তি মিলতে পারে।

এমজে/