গুরুতর অভিযোগে তদন্তের মুখে বৃটিশ কারি এওয়ার্ডের আয়োজক এনাম আলি

গুরুতর অভিযোগে তদন্তের মুখে বৃটিশ কারি এওয়ার্ডের আয়োজক এনাম আলি

কর্মীদের আধুনিক দাসত্বে বাধ্য করার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক রেস্তোরাঁ মালিকের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত চলছে। দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের সারে এলাকায় অভিযান চালিয়ে এনাম আলী (৫৮) নামের ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির তহবিলদাতা (ডোনার) ও সাবেক ও বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ এনামকে পরে মুক্তি দেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এনাম।

যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর যারা ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করে, এনাম আলী তাদের অন্যতম। বরিস জনসন, থেরেসা মে, ডেভিড ক্যামেরন-এর মতো শীর্ষ রাজনীতিকদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় তাকে ছবিতে দেখা গেছে।

২০০৮ সালে তাকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আতিথেয়তা বিভাগের উপদেষ্টা প্যানেলে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে তিনি ‘ভিনদালু ভিসা’ নামে বিশেষ ভিসা চালু করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করেন। এই ভিসার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে কর্মী নিয়ে ব্রিটিশ কারি শিল্পের কর্মী সংকট মেটানোর কথা বলা হয়েছিল।

এক বাংলাদেশি কর্মীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনামের রেস্তোরাঁয় পুলিশি অভিযান চালানো হয়। সাবেক ওই কর্মীর দাবি অনুযায়ী, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করলেও তাকে কোনও বেতন দেওয়া হয়নি। থাকতে দেওয়া হয়েছে বাজে পরিবেশে। দেওয়া হয়নি ছুটিও। এমনকি পাঁচ বছরের ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তাকে অবৈধভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ওই কর্মী পশ্চিম লন্ডনে এক আত্মীয়ের সঙ্গে থাকছেন। তিনি ‘মানবিক কারণ’ দেখিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকতে দেওয়ার আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।

এপসম এলাকায় এনামের মালিকানাধীন লি রাজ রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে কাজ করতেন ওই কর্মী। অভিযানের সময়ে পুলিশ বুঝতে পারে যে সেখান থেকে নথিপত্র ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সারে পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, সন্দেহজনক আধুনিক দাসত্ব চালানোর অভিযোগে গত ১২ জুলাই এক ব্যক্তিকে আটক করা হয় এবং তদন্তের আওতায় রেখে তাকে পরে মুক্তি দেওয়া হয়।

ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনাম আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু থেরেসা মে’র জন্য বিশেষ রকমভাবে বিব্রতকর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি আধুনিক দাসত্বের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচারণা শুরু করেছিলেন। ওই প্রচারণায় লন্ডনের মেয়র হিসেবে তার সঙ্গে ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ২০১৪ সালে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন থেরেসা মে। ওই অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী সালওয়ার কামিজ পরে এনাম আলীর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে তাকে।

২০১৩ সালে একই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেভিড ক্যামেরন। ওই বছরে রক্ষণশীল দলে ছয় হাজার ইউরো অনুদান দেন এনাম আলী। তারও তিন বছর আগে তাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে তিনি ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলোর কর্মী সংকট মোকাবিলায় অভিবাসন নীতি শিথিলের চেষ্টা চালান। ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ডাচেস অব ইয়র্ককেও দেখা গেছে।

আতিথেয়তা শিল্পে অবদানের জন্য ২০০৯ সালে এনাম আলীকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্মানজনক এমবিই পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এনাম কৈশোরে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। ব্রেক্সিট সমর্থক এনাম মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে গেলে ভারত ও বাংলাদেশের কর্মীরা সহজে ব্রিটিশ ভিসা পাবে।

১৯৮৯ সালে এপসম এলাকায় চালু করা হয় লি রাজ রেস্তোরা। বহু নামী তারকার কাছে তা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এর ওয়েবসাইটে টিভি তারকা ইয়ামোন হোমস, শেন রিচি, ক্রিস ট্যারান্ট, তারকা শেফ হেস্টন ব্লুমেন্থাল ও জেমস মার্টিনের ছবি রয়েছে। পুলিশি অভিযানের দুই দিন আগে ওই রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার সেরে এনাম আলীর ছেলের সঙ্গে ছবি তোলেন অভিনেতা জনি ডেপ। হলিউড তারকা লি রাজের পেয়াজ ভাজি খেয়ে এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তিনি সেখানকার কর্মীদের বলেছিলেন এখানকার একদল কর্মীকে তার সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলসে নিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকের সময় খেলোয়াড়দের আনুষ্ঠানিক খাবার সরবরাহকারীর তালিকায় ছিল লি রাজ।

শনিবার রাতে এনাম আলী দ্য মেইলের কাছে দাবি করেছেন, অভিযোগ তোলা কর্মী ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত পূর্ণ পারিশ্রমিকে লি রাজ-এ সহকারি শেফ হিসেবে কাজ করতেন। তিনি জানান, ২০১৪ সালে তার ছেলে জেফারি (২৭) রেস্তোরাঁটির মালিকানা বুঝে নেয়। যদিও ওই সময়ে তিনি এটি বন্ধ করে দিতে চাইছিলেন।

এনাম আলী বলেন, ‘২০১৫ সালের মে মাসে আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় যে এক কর্মীর যুক্তরাজ্যে কাজ করার অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে তাকে আমাকে তার নিয়োগ বাতিল করতে হয়। এই ভয়ানক, মিথ্যা অভিযোগ চার বছরেরও বেশি সময় পর তোলা হয়েছে আর কেবলমাত্র সে কারণেই এটা বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখছি’। তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা, ভয়ানক ক্ষতিকর এবং খুবই পীড়াদায়ক।’। সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন।