ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে কাশ্মীরিরা, নেই ঈদের আনন্দ

ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে কাশ্মীরিরা, নেই ঈদের আনন্দ

আগামী সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে গত সোমবার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। সেই সঙ্গে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এই অচলাবস্থায় সেখানে খাদ্যে স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

সোমবার থেকে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগও। কারফিউ থাকায় চলাচলেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এ অচলাবস্থায় কাশ্মীরের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগও বন্ধ। ব্যাংক ও এটিএম বুথগুলোতেও টাকা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কাশ্মীরবাসী। ৭২ ঘণ্টা পার না হতেই তাই দোকানগুলোতেও শেষ হয়ে গেছে খাবার।

এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বেড়ে গেছে বহুগুণ। তিনদিন ধরে চলা এই অচলাবস্থায় না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে অনেক কাশ্মীরিকে। খাবারের স্বল্পতা ও এটিএম কাজ না করায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেখানকার শতাধিক স্থানীয় নেতাকে। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি।

সানা নামে ২৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বলেন, তার কাছে পাঁচ ছয়জন ব্যক্তি এসে দাবি করেছিল তাদের পরিবার না খেয়ে আছে। তিনি আরো বলেন, ‘মুদির দোকানে যেন মানুষের বন্যা ছিল। মসলা ও শাকসবজির দোকানেও ছিল ভিড়। হাজার হাজার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া গ্যাস স্টেশনগুলোতেও ছিল গাড়ির লম্বা লাইন। ব্যাংকগুলোতেও টাকা শেষ হয়ে গেছে।’

সানা বলেন, এই অচলাবস্থায় অনেক নৈরাজ্য ও দ্বিধা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খুবই ভয়াবহ ও দুঃখজনক। বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে সবাই।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর উপ-সম্পাদক মুজামিল জলিল টেলিগ্রাফকে বলেন, তারা শ্রীনগরের সব এটিএমেই খোঁজ নিয়ে দেখেছেন টাকা নেই। অনেকেই এখন হাতে হাতে টাকা নিয়ে ঘুরছে। আর দরিদ্র্য গোষ্ঠীর কোনো জমা টাকাও নেই।

অধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনকারী ও বিরোধী পক্ষের নেতাকে গ্রেপ্তার করছে কেন্দ্রীয় সরকার।

স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত শতাধিক গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহও রয়েছেন। বিরোধী দলের অভিযোগ, সরকার ভারতের জনতাত্ত্বিক নকশাই পরিবর্তন করে দিতে চাইছে।

তবে এই খাদ্যাভাবের ঘটনাকে অস্বীকার করেছেন ভারতের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তার দাবি, কাশ্মীর উপত্যকায় তিন মাসেরও বেশি খাবার মজুত রয়েছে।

কেমন যাবে ঈদ?
কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য এটি কেমন ঈদ হবে সেটি এখনো অনিশ্চিত। কারণ এখানকার মানুষ তাদের জীবনকে উল্টোদিকে পরিণত করার বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। বিশ্বের মানুষও তাদের বাস্তবতার সঙ্গে মোকাবিলা করা ব্যাপারটি দেখবে। আর এই ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরিরা কীভাবে তাদের নতুন বাস্তবতার প্রতিক্রিয়া জানাবে? সেটিও দেখার অপেক্ষা করছে বিশ্ব।

এদিকে দিল্লির শাসন বিরোধী নেতা-কর্মীসহ কারাগারে বন্দি কাশ্মীরি নেতারা ঈদ উদযাপনে মুক্তি পাবে কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়। তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং হুরিয়াত সম্মেলনের শীর্ষস্থানীয় সকল সদস্য বর্তমানে কারাগারে বা গৃহবন্দী রয়েছেন।

এমআই