ট্রেনের পর এবার দিল্লি-লাহোর বাসও বন্ধ করল পাকিস্তান

কাশ্মীরে স্বপ্ন পূরণ উৎসব বিজেপির

কাশ্মীরে স্বপ্ন পূরণ উৎসব বিজেপির

কাশ্মীর নিয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বিজেপির। তাই এবার কাশ্মীরজুড়ে ‘জশন-ই-আজাদি’দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি।

আগামী ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিনেই কাশ্মীরের আনাচে-কানাচে এ দিবস পালন করার কথা বলা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে।

বিজেপির মতে, ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পর প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা পেয়েছে। গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে খুশি উপত্যকার বাসিন্দারাও। তাই দলের কৃতিত্বকে জনসমুক্ষে আরও প্রচার করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।

এ প্রসঙ্গে বিজেপির কাশ্মীর রাজ্যের সভাপতি রবীন্দ্র রায়না জানান, আগামী ১৫ আগস্ট গোটা উপত্যকায় দলের পক্ষ থেকে ‘জশন-ই-আজাদি’ পালন করা হবে। ইতিমধ্যেই যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন গ্রাম প্রধানদের কাছে এই উদযাপনের বার্তা পৌঁছেও দেয়া হয়েছে।

বিজেপির কথায়, ৩৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কাশ্মীরকে বদ্ধভূমি করে রাখা হয়েছিল। এখন অবস্থার বদল হবে। দেশের মূল ভূখণ্ডের মানুষের মতোই সেখানকার বাসিন্দারা সুযোগ-সুবিধা পাবেন। খুশি উপত্যকার বাসিন্দারা। দাবি পদ্ম শিবিরের। এই পরিস্থিতিতে তাই দলীয় কৃতিত্বের বিষয়টিকে এই উদযাপনের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি।

দলের রাজ্য সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অশোক কৌল মনে করেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রতিটা জেলা, মহল্লা ও পঞ্চায়েতে বিজেপির তরফে ‘জশন-ই-আজাদি’ পালন করা হবে। দল মনে করছে এতে সেখানকার মানুষের পাশে থাকার যেমন বার্তা দেয়া যাবে, তেমনই বিরোধীদেরও অনেক জবাব দেয়া সম্ভব।

জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সাধারণ সম্পাদক অশোক কৌল বলেন, ‘সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ হওয়ায় এখানকার মানুষ সমধিকার পেল। সরকারের নানা প্রকল্পের সুবিধা এবার তারা ভোগ করবে। তাই রাজ্যের সব বাসিন্দার উদযাপনে সামিল হওয়া প্রয়োজন।’ রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকাতে শান্তি বজায় রাখার জন্য মানুষকে ধন্যবাদও দেন তিনি।

উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান প্রদত্ত বিশেষ অধিকার ৩৭০ ধারা রদ করেছে কেন্দ্র। ফলে এখন থেকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের মতোই সুযোগ-সুবিধা পাবে তারা। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ দুটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হবে। লাদাখে কোনো বিধানসভা থাকবে না।

কাশ্মীর থেকেই বিয়ের জন্য মেয়ে নিয়ে আসা যাবে : কাশ্মীরি নারীদের উদ্দেশে এবার কুরুচিকর মন্তব্য করলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার। শুক্রবার ফতেহাবাদে মহাঋষি ভগীরথ জয়ন্তী সমারোহ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বিজেপির এই মুখ্যমন্ত্রী।

সেখানেই তিনি জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা লোপ প্রসঙ্গ তুলে মহিলাদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। খাট্টার বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী ওপি ধনকড় বলেছেন তিনি বিহার থেকে পূত্রবধূ নিয়ে আসবেন।

তবে মানুষ এখন বলছেন কাশ্মীরের রাস্তা তো পরিষ্কার। তাই কাশ্মীর থেকেই বিয়ের জন্য মেয়ে নিয়ে আসা যায়।’ হরিয়ানায় ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ কর্মসূচিতে এ মন্তব্য করেন খাট্টার।

একই বক্তব্যে হরিয়ানার উন্নয়নের পক্ষে তিনি বলেন, ‘হরিয়ানায় শিশু কন্যা জন্মের হার ছিল অত্যন্ত কম। কিন্তু সরকার বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কর্মসূচি নিয়ে আসার পর কন্যা সন্তান জন্মের হার বেড়েছে।’ এনডিটিভি।

৭ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের বিজেপি বিধায়ক বিক্রম সাইনি বলেছিলেন, ‘৩৭০ ধারা লোপের পর বিজেপি কর্মীরা বেশ উত্তেজিত। এখন তারা কাশ্মীরের সুন্দরী মহিলাদের বিয়ে করতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে কোনো কাশ্মীরি মেয়ের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কারও বিয়ে হলে নাগরিকত্ব বদলাতে হতো। উপত্যকার মেয়েদের বাইরে বিয়ে হলে নাগরিকত্ব বাতিল হতো। এবার আর বিয়েতে কোনো বাধা রইল না। ওখানের ফর্সা মেয়েদের বিয়ে করতে পারবেন উত্তরপ্রদেশের নাগরিকও। মোদিজি আমাদের স্বপ্নপূরণ করেছেন।’

এই মন্তব্যের জন্য প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল সাইনিকে। যদিও তিনি দাবি করেন, কোনো বিতর্কিত মন্তব্য তিনি করেননি। এবার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীও একই মন্তব্য করে বসলেন।

এদিকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পর ভারতের সঙ্গে একের পর এক সম্পর্ক ছিন্ন করে যাচ্ছে পাকিস্তান। সমঝোতা ও থর এক্সপ্রেস বন্ধ ঘোষণার পর এবার দু’দেশের মধ্যে চলাচলকারী বাস পরিষেবাও বন্ধ করে দিল পাকিস্তান।

দেশটির যোগাযোগ ও ডাক বিভাগের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী মুরাদ শহিদ টুইট করে জানান, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী বাস পরিষেবা বন্ধ করা হল। গেল বৃহস্পতিবার সমঝোতা এক্সপ্রেস বন্ধ করার কথা ঘোষণা করে পাকিস্তান। তারপর শুক্রবার বন্ধ করে দেয়া হয় দু’দেশের মধ্যে চলাচলকারী থর এক্সপ্রেস।

শনিবার বন্ধ করা হল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একমাত্র বাস পরিষেবাটিও। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সদা-ই-সরহদ নামের বাস পরিষেবা শুরু হয় ১৯৯৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ী নিজে প্রথম বাসে চড়ে লাহোরের বৈঠকে যোগ দিতে যান। ওয়াঘায় তাকে স্বাগত জানান তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ২০০১-এ সংসদ হামলার পরে এই বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলেও ২০০৩ সাল থেকে ফের শুরু হয়।

কাশ্মীর থেকে বিশ্বের নজর ঘোরাতে ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ তৈরি করতে পারে ভারত- ইমরান খান : কাশ্মীর থেকে বিশ্বের নজর ঘোরাতে ভারত ‘যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি’ তৈরি করতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আনন্দবাজার

ইমরান খানের দাবি, পুলওয়ামার পরেও এমন অবস্থা তৈরি হয়েছিল। এই দাবি উড়িয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন ওরাই। আন্তর্জাতিক মহল কোনো যুদ্ধ-পরিস্থিতি দেখছে না। এসবই হল ছলচাতুরী করে নজর ঘোরানোর চেষ্টা।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়াতেই ভারত তড়িঘড়ি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে বলে মনে করছেন ইমরান। গতকাল তিনি বলেন, ভারত এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যাতে অন্য পক্ষের উপরে দায় পড়ে।

ইমরান খান আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এ ভাবেই দেখেছি যুদ্ধ বাধতে। আমরা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেয়েছি। কিন্তু ভারত ভোটে পুলওয়ামার ফায়দা নিতে চাইল। এখন চেষ্টা চালাচ্ছে আমাদের এফএটিএফের কালো তালিকায় তোলার।’

রবীশ কুমার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নতুন বাস্তবকে প্রত্যক্ষ করে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুক পাকিস্তান।’