কেন আত্মহত্যা করলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ছেলে

কেন আত্মহত্যা করলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ছেলে

ঢাকা, ২ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : কিউবার বিপ্লবের নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ৬৮ বছর বয়স্ক ছেলে রাজধানী হাভানায় আত্মহত্যা করেছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে খবর দেয়া হচ্ছে।

ফিদেল অ্যাঞ্জেল ক্যাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্টকে বৃহস্পতিবার সকালে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। বলা হচ্ছে তিনি বিষন্নতায় ভুগছিলেন।

ফিদেল অ্যাঞ্জেল ক্যাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্ট ছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর প্রথম সন্তান। তাকে আদর করে ফিদেলিটো বা 'ছোট্ট ফিদেল' বলে ডাকা হতো, কারণ তার চেহারা সঙ্গে বাবার চেহারার অনেক মিল ছিলো।

তিনি পেশায় ছিলেন একজন নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট। পড়াশোনা করেছেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে।

কিউবার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র 'গ্রানমা'র খবরে বলা হয়, গত কয়েক মাস ধরেই ফিদেল ক্যাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্ট তীব্র বিষন্নতায় ভুগছিলেন। তাকে একদল চিকিৎসক এজন্যে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। কিন্তু গতকাল সকালে তিনি আত্মহত্যা করেন।

এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে কিউবার বিপ্লবের নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো মারা যান। কিউবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই খবর প্রচারিত হওয়ার পর সাধারণ কিউবানরা তা শুনে বিস্মিত হন।

ক্যাস্ত্রো পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিউবায় বেশ গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। তার মৃত্যুর খবর প্রচারের আগে পর্যন্ত অনেকে জানতেনই না যে তিনি মানসিক বিষন্নতায় ভুগছিলেন।

মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি কিউবার সরকারের 'একাডেমি অব সায়েন্সের' একজন উপদেষ্টা ছিলেন।

১৯৮০ সাল হতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি কিউবার পরমাণু কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর কিউবার এই পরমাণু কর্মসূচী বন্ধ হয়ে যায়।

ফিদেল ক্যাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্টের জন্ম ১৯৪৯ সালে। কিউবার বিপ্লবের আগে সেসময়ের এক নামকরা রাজনীতিত মির্টা ডিয়াজ-বালার্টকে বিয়ে করেছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তাদের বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। সেই

যখন ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের মাধ্যমে বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো, তখন মির্টা ডিয়াজ-বালার্ট এবং তাদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পালিয়ে যায়।

বাবা-মায়ের যখন বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তখন ফিদেলিটো তার শৈশবের কিছু সময় যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন। কিন্তু ফিদেল ক্যাস্ত্রো তাকে কিউবায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।

কেন ফিদেলিটোর মায়ের দিকের অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কিউবার সরকারের এত কঠোর সমালোচক, সেটার কারণ এ থেকেই বোঝা যায়। ফিদেলিটোর এক মামাতো ভাই মারিও ডিয়াজ-বালার্ট এখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সদস্য।

ফিদেলিটো নিজে কিউবার বিপ্লবের প্রতি এবং তার বাবার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাবান ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নাকি বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিলেন। বিশেষ করে কিউবার জ্বালানি খাতের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যেভাবে তার মতামতকে আর আমলে নেয়া হচ্ছিল না, সে কারণে।

তার এক সাবেক সহকর্মী জোনাথান বেনজামিন আলভারাডো রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ফিদেলিটো নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে যেসব পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছিলেন, সেগুলো কিউবার রাষ্ট্রীয় নীতিতে সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছিল না। সেজন্যেই হয়তো ফিদেলিটো কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।

ফিদেলিটোর শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন তার পরিবারই করবেন, তবে এর বিস্তারিত এখনো জানানো হয়নি।

ফিদেল ক্যাস্ত্রো ২০১৬ সালে ৯০ বছর বয়সে মারা যান। -বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ ডেস্ক/ একে/১৯৩২ঘ.)