সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সেনা লেলিয়ে দিয়েছে ভারত : অরুন্ধতী রায়

সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সেনা লেলিয়ে দিয়েছে ভারত : অরুন্ধতী রায়

ভারতের খ্যাতিমান লেখক ও মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধতী রায় বলেছেন, দেশের সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার।

স্বাধীনতার পর থেকেই ‘নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধেই’ বারবার সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

কাশ্মীর অবরোধ ও অব্যাহত কারফিউয়ের জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকারের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন, কাশ্মীরিদের তাদের ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা হয়েছে। রাজবন্দি করা হয়েছে সব রাজনৈতিক নেতাকে।

সব যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে গত ২৩ দিন ধরে তাদের স্বাভাবিক জীবন স্থবির করে দেয়া হয়েছে। একেবারে নতুন ধরনের দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সরকার। মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন ম্যান বুকার জয়ী এ ঔপন্যাসিক।

এ মন্তব্যের কারণে ইতিমধ্যে বিতর্কের মুখে পড়েছেন অরুন্ধতী। তাকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে সমালোচনা করছে ভারতীয়দের অনেকেই। ইন্ডিয়া টুডে। মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বরাবরই সরব ও সোচ্চার অরুন্ধতী রায়।

এ ইস্যুতে প্রায় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন তিনি। জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতেও শুরু থেকেই নিপীড়িত কাশ্মীরিদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। নানা সংবেদনশীল বিষয়ে নিজের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তাকে দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এরপরও কাশ্মীরের স্বাধিকারের পক্ষে বহুদিন ধরেই নিজের মতামত ধরে রেখেছেন তিনি। উপত্যকার স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরই কাশ্মীরিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দিল্লিতে বসবাসরত কাশ্মীরিদের সঙ্গে ঈদের খাবার খেয়ে নজির স্থাপন করেন অরুন্ধতী। প্রশ্ন তুলেছেন, কাশ্মীরে কেন লাখ লাখ সেনা।

এরই ধারাবাহিকতায় ভিডিও বার্তা নিয়ে ফের হাজির তিনি। ভিডিও বার্তায় অরুন্ধতী বলেছেন, ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার পর থেকেই সেনাবাহিনীকে কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদ-তেলেঙ্গানার মুসলিমদের বিরুদ্ধে, পাঞ্জাবের শিখদের ওপর, গোয়ার খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারত তার নিজের লোকদের বিরুদ্ধে সেনা মোতায়েন করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে পরিস্থিতির তুলনা করে তিনি আরও যোগ করেন, ‘পাকিস্তান রাষ্ট্র ভারতীয় রাষ্ট্রের মতো তার সেনাবাহিনীকে তার নিজের লোকের বিরুদ্ধে কখনও লেলিয়ে দেয়নি। তবে ভারত এই কাজটি বারবার করেছে।’

এমন মন্তব্যের পর টুইটারে হ্যাশট্যাগ দিয়ে অরুন্ধতীর সমালোচনা করছে ভারতীয়রা। তার এ মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

পাকিস্তান ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কঠোর সমালোচক কানাডিয়ান সাংবাদিক তারেক ফাতাহ অরুন্ধতীর এই ভিডিওটি টুইট করে লিখেছেন, ‘তিনি (অরুন্ধতী) বলেছেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কখনও তাদের নিজেদের নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে গণহত্যা করেছিল। সেই সময় তিনি কি অন্ধ এবং শ্রবণশক্তিহীন ছিলেন? তিনি কি বেলুচিস্তান সম্পর্কে কিছু জানেন না? মনে হচ্ছে তিনি আক্ষরিক অর্থেই আইএসআইয়ের ব্রিফিং নোট পড়ছেন।’

অনেক ভারতীয় তারেক ফাতাহর মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। অরুন্ধতীকে আক্রমণ করে আরেকজন বলেছেন, ‘তিনি একজন ছদ্মবেশী বুদ্ধিজীবী। পাকিস্তান যখন কাশ্মীরের জন্য ইউএনএসসিতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে তখন আলোচনায় থাকার জন্য অরুন্ধতী তার আত্মা বিক্রি করেছেন। সীমান্তের শত্রুদের চেয়ে এসব ছদ্মবেশী বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে বেশি হুমকি পেয়েছে ভারত।’

আয়েশা ইজাজ নামের এক পাকিস্তানি আইনজীবী লিখেছেন, ‘ভারতীয় রাষ্ট্র এবং তার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করে মন্তব্য করার জন্য অরুন্ধতী রায়কে সম্মান জানাই।

একইভাবে যারা পাকিস্তানি রাষ্ট্র এবং তার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সমালোচনা করা তাদেরকেও আমি সম্মান জানাই।’

এমজে/