কাশ্মীরে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

কাশ্মীরে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

যুদ্ধের ডাক আগেই দেয়া হয়েছে কাশ্মীরে। এবার দেয়া হল অসহযোগ আন্দোলনের। দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সব বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।

অফিস-আদালত না যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ভারত সরকার ও সেনা-পুলিশকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উপত্যকার স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল না করা পর্যন্ত কাশ্মীরের সর্বস্তরের মানুষকে সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও লাখ লাখ সেনা দিয়ে অবরোধ আরোপের এক মাসের মাথায় উপত্যকাজুড়ে হাজার হাজার পোস্টার মেরে এই অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে।

তবে কে বা কারা এসব পোস্টার ছড়িয়েছে, তা জানা যায়নি। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, উপত্যকার জনগণের মধ্যে ভয় ছড়ানোর চেষ্টা করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো। খবর ইন্ডিয়া টুডে ও রয়টার্সের।

অবরুদ্ধ কাশ্মীরে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল হলেও উপত্যকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত সপ্তাহে কাশ্মীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ‘যুদ্ধ পোস্টার’।

এতে শেষ বুলেট পর্যন্ত সেনাদের লড়াইয়ের আহ্বান জানানো হয়। পোস্টারে নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর নাম না থাকায় এ ঘটনায় পাকিস্তানের দিকেই অভিযোগের তীর ছুড়ছে ভারত।

চলতি সপ্তাহেই কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলের অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাস্তায়-গলিতে ফের পোস্টার ছড়িয়ে পড়ে। উর্দু ভাষায় লেখা পোস্টারগুলো প্রধানত উপত্যকার অনন্তনাগ ও সোপিয়ান, উত্তর কাশ্মীরের জেলাগুলো এবং শ্রীনগরের উপশহরগুলোতেও দেখা গেছে।

এতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, দিনমজুর, পরিবহন মালিক-কর্মী এমনকি রাস্তার হকারসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় কাজ করলে কঠোর পরিণতির হুশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা সহযোগিতা করবে তারা বিশ্বাসঘাতক। রয়টার্স জানায়, কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। উপত্যকার শিক্ষার্থী, দোকানদার এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মীরা রাজ্যজুড়ে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করছেন।

শ্রীনগরের পুরনো শহর এলাকার এক দোকানদার বলেন, আমাদের জাতি পরিচয় বিপন্ন। এর সুরক্ষাই এখন আমাদের অগ্রাধিকার। ভারতকে আগে সেটা ফিরিয়ে দিতে হবে। তখনই আমরা আমাদের ব্যবসা পুনরায় চালু করব।

পোস্টারগুলোতে স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার সুবিধার্থে দোকানদারদের শুধু ভোর ও সন্ধ্যায় তাদের দোকান খোলা রাখতে বলা হয়েছে। শ্রীনগরের বাণিজ্যিক এলাকার অধিকাংশ দোকানই বন্ধ রাখা হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনী দোকানিদের স্বাভাবিক সূচি অনুযায়ী দোকান খোলা রাখতে বললেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। স্কুল ও সরকারি অফিসগুলোতেও উপস্থিতির হার খুবই নগণ্য। নিরাপত্তার অভাবে স্কুলগুলোতে ছেলেমেয়েদের পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, পশ্চিম শ্রীনগরে সরকারের আবাসন ও নগর উন্নয়নের দফতরের ৩০০ কর্মীর মধ্যে স্রেফ ৩০ জন হাজির থাকেন।

রাজস্থানে কাশ্মীরি ছাত্রকে কামিজ পরিয়ে গণপিটুনি : খুঁটিতে পিছমোড়া দিয়ে বাঁধা। পরনে নারীদের পোশাক সালোয়ার-কামিজ। তাকে ঘিরে ধরে চলছে এলোপাতাড়ি গণপিটুনি। নাক-মুখ-বুকে কিল-ঘুষি ছুড়ছে একদল উন্মত্ত যুবক। ভারতের রাজস্থানে বুধবার এভাবেই বর্বর নিপীড়নের শিকার হয়েছে এক কাশ্মীরি ছাত্র। মারধরের এই ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই সঙ্গে বইছে নিন্দার ঝড়।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, নির্যাতনের শিকার ওই তরুণের নাম মীর ফাইদ (২৫)। তিনি কাশ্মীরের সোপার এলাকার বাসিন্দা। রাজস্থানে নীমরানায় একটি বেসরকারি কলেজের অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বুধবার রাতে কলেজ থেকে হোস্টেলে ফিরছিলেন ফাইদ। এ সময় দুই ব্যক্তি তার পথ আটকায়। পুলিশের কাছে অভিযোগনামায় মীর ফাইদ বলেন, ‘তারা আমাকে মারধরের ভয় দেখিয়ে, জোর করে সালোয়ার-কামিজ পরতে বাধ্য করে।

এমজে