‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় পিটিয়ে হত্যা, পুলিশ রিপোর্টে ‘হার্ট-অ্যাটাক’

‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় পিটিয়ে হত্যা, পুলিশ রিপোর্টে ‘হার্ট-অ্যাটাক’

জুনে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, এক মুসলিম যুবককে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে বলা হয়, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় ওই যুবককে টানা ১৮ ঘন্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে তাকে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারদিন পরে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।

মৃত ওই মুসলিম যুবকের নাম তাবরেজ আনসারি। আর অকথ্য এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে ভারতের ঝাড়খণ্ডে। ঘটনার অনেক পরে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। পরে চুরির অভিযোগে তাবরেজকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। আদালত থেকে পরে জেলহাজতে। পরে অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তবরেজকে। সেখানেই তিনি মারা যান। মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, হাজতে মৃত্যুর পরেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে।

মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই গণপিটুনির ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত তাবরেজ আনসারির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে গণপিটুনিতে নয়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

এই মামলার চার্জশিট নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন পুলিশ জানায়, তারা ২৪ বছর বয়সী তাবরেজ আনসারির ওপর হামলার জন্য অভিযুক্ত ১১ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেছে। শনিবার আরও এক অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করলে দ্বাদশ অভিযুক্ত হিসেবে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। ২২ জুন একটি হাসপাতালে মারা যান তাবরেজ আনসারি।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের সারাইকেলা-খারওয়ানে আরও দুই যুবককে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চুরি করছিলেন এই সন্দেহে তাবরেজ আনসারিকে কয়েক ঘণ্টা ধরে বেধড়ক মারধর করে উত্তেজিত জনতা। মারধরের পাশাপাশি ওই যুবককে ‘জয় শ্রী রাম’ বলতেও বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। গণপিটুনিতে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার চারদিন পরে ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ঝাড়খণ্ডের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা কার্তিক এস এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, মেডিকেল রিপোর্টে হত্যার পক্ষে কোনো সমর্থনযোগ্য প্রমাণ মেলেনি যার ভিত্তিতে আমরা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করাতে পারি। তিনি এ-ও জানান যে, দুটি পৃথক ময়নাতদন্তের রিপোর্টে একই তথ্যই পাওয়া গেছে, তা হলো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন তাবরেজ আনসারি।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা প্রথমবার যখন এই মেডিকেল রিপোর্ট পাই তখন আমরা উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে দ্বিতীয়বার মতামত চেয়েছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বারও বিশেষজ্ঞরা একই মতামত দিয়েছেন যে, তিনি গ্রেফতারের কারণে হওয়া মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতা জেরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন।

তাবরেজ আনসারির মৃত্যুর পর তদন্তে নেমে সারাইকেলা-খারওয়ানের জেলা প্রশাসক অঞ্জনেউলু দোডের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল প্রাথমিকভাবে পুলিশ এবং তদন্তকারী চিকিৎসক উভয়পক্ষকই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিলেন।

জুলাই মাসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ দেরিতে পৌঁছানোয় চিকিৎসকরাও মাথার খুলির আঘাতের সঠিক পরিমাণ শনাক্ত করতে পারেননি।

এমআই