ব্রেক্সিট ঝড়: জনসন কি এলিজাবেথকে বিভ্রান্ত করেছেন

ব্রেক্সিট ঝড়: জনসন কি এলিজাবেথকে বিভ্রান্ত করেছেন

ব্রিটেনে দীর্ঘদিনের অলিখিত প্রথা এটাই যে, রানি সবসময় সরকারের পরামর্শে কাজ করবেন। তবে কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে কখনই কোনো পক্ষ নেবেন না, মতামত দেবেন না। কয়েক দশক ধরে দল-মত নির্বিশেষে ব্রিটেনের রাজনীতিকরা অলিখিত একটি চুক্তি এবং প্রথা অনুসরণ করছেন যে তারা কখনই রানিকে দিয়ে এমন কিছু করাবেন না বা বলাবেন না যাতে তিনি কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের বিতর্কে পড়তে পারেন।

কিন্তু সরকারের পরামর্শে সংসদ স্থগিত করার তার এক নির্দেশ বেআইনি ঘোষণা করে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর সেই বিতর্কেই পড়ে গেছেন রানি এলিজাবেথ। পাঁচ সপ্তাহের জন্য সংসদ স্থগিত করার সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত ছিলেন বিরোধীরা।

তাদের কথা- চুক্তি হোক আর না হোক ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনার তার সংকল্পে যেন সংসদ বাধা না দিতে পারে সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রথা ভেঙ্গে এভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংসদ স্থগিত করেছেন।

কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বে-আইনি ঘোষণার পর ব্রেক্সিট নিয়ে অব্যাহত রাজনৈতিক ঝড়ের মাঝে পড়ে গেছেন ব্রিটেনের রানি।

কারণ, সরকারের পরামর্শে যে নির্দেশনা তিনি জারি করেছিলেন, সেটাকেই সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি ঘোষণা করেছে।

নজিরবিহীন এই রায়ে রানি যে চরম বিব্রত হয়েছেন- এ নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো বিতর্ক নেই।

বিবিসির রাজ-পরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মন্ড বলছেন, ‌‘এটা এমনই এক পরিস্থিতি যা রানি সবসময় এড়িয়ে চলতে চান।’

কিন্তু তিনি পারেননি।

বিরোধী রাজনীতিকরা এখন খোলাখুলি বলতে শুরু করেছেন, সংসদ স্থগিত করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জেনে-বুঝে রানিকে মিথ্যা বলেছেন, বিভ্রান্ত করেছেন এবং এর জন্য রানীর কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী জন মেজর বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে আর কখনই কোনো প্রধানমন্ত্রী যেন এভাবে রানি এবং সংসদের সাথে আচরণ না করেন।’

রানীকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রী বরিন জনসনের বিরুদ্ধে
রানি কি ‘না’ বলতে পারতেন?

সংসদ স্থগিত করা নিয়ে রানি কি বরিস জনসনের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করতে পারতেন?

তিনি কি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারতেন, পাঁচ সপ্তাহের জন্য সংসদ স্থগিত করার পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ নেই, এবং ব্রেক্সিট কার্যকরী করার ঠিক আগ মুহূর্তে এ সিদ্ধান্ত নিলে তিনি পক্ষপাতিত্বের বিতর্কে পড়ে যেতে পারেন।

যে সরকারি প্রতিনিধিদল ব্যালমোরাল প্রাসাদে রানীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের সাথে রানির কি কথাবার্তা হয়েছিল তা হয়তো কখনই জানা যাবেনা।

কিন্তু বিবিসির জনি ডায়মন্ড বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করা রানির জন্য অসম্ভব ছিল। কারণ তা হতো নজিরবিহীন এবং তার ফলে অভূতপূর্ব এক সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারতো।

রানি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ শুনবেন- এটাই ব্রিটেনের অলিখিত অবশ্য-পালনীয় প্রথা।

রাজ-পরিবার সম্পর্কিত বিবিসির আরেক সংবাদদাতা নিকোলাস উইচেল বলছেন, কাগজে-কলমে কিছু বিষয়ে রানি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করার অধিকার রাখেন।

‘কিন্তু বাস্তবে এই অধিকার একটি ফ্যান্টাসি ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বিবিসির ঐ সংবাদদাতা বলছেন, প্রতিষ্ঠিত প্রথা এটাই যে সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রানি সবসময় প্রধানমন্ত্রীর ‘পরামর্শ মানতে বাধ্য।’

সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিরা যখন ব্যালমোরাল প্রাসাদে তার সাথে দেখা করেন, রানির পক্ষে যা করা সম্ভব ছিল তিনি তাই করেছেন।

ব্যক্তিগত অস্বস্তি থাকলেও, সংসদ স্থগিত করার পরামর্শে রানিকে সম্মতি দিতেই হয়েছে।

‘কিন্তু কোনো সন্দেহ এই ঘটনা রানির জন্য চরম অস্বস্তির কারণ হয়েছে। কারণ তিনি সব সময় চেয়েছেন এই ব্রেক্সিট বিতর্ক থেকে যেন তাকে বাইরে রাখা হয়।’

এমআই