দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী

ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন ইসরাইলের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার তিন দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠনের ঘোষণা দেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল আভিচাই মেন্ডেলব্লিট। কেস (মামলা) ৪০০০, ২০০০ ও ১০০০ নামে পরিচিত দুর্নীতির দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে টানা কয়েক মাস তদন্ত শেষে ফেব্রুয়ারিতে তাকে অভিযুক্ত করার সুপারিশ করেছিল পুলিশ। এ খবর দিয়েছে ইসরাইলের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য হারেৎস।

খবরে বলা হয়, গত মাসে নেতানিয়াহুর আইনজীবী দলের সঙ্গে চার দিনব্যাপি শুনানি ও তীব্র আলোচনা শেষে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন মেন্ডেলব্লিট। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগগুলো নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন তিনি।

এটা কোনো বামপন্থি বা ডানপন্থি রাজনীতির ব্যাপার নয়। এক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগও ইচ্ছাধীন কোনো বিষয় নয়। তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বিস্তৃত প্রমাণ ও সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে পরিচালনা করা হয়েছে। সবকিছুই পেশাদারভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। কোনো প্রচেষ্টা বাদ রাখা হয়নি।

এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু। এক বিবৃতিতে অভিযোগ গঠনের পদক্ষেপকে তার বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থানের অপচেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত কররেছেন তিনি। টিভিতে প্রচারিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, কর্তৃপক্ষ আসলে সত্য উদঘাটনে ইচ্ছুক নয়, তারা আমার পেছনে লেগেছে।

তবে অভিযোগ গঠনকে সমর্থন জানিয়েছে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী কাহল লাভান গান্টজ। বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আভিচাই মেন্ডেলব্লিট নেতৃত্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে তার। তিনি আরো বলেন, ইসরাইলে কোনো সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হচ্ছে না। এখানে ক্ষমতার পরিখা খনন কররা হচ্ছে। নেতানিয়াহু আজ প্রমাণ করেছেন যে, তাকে তার পদ ছাড়তে হবে। নিজের আইনি দুর্দশার দিকে নজর দিতে হবে।

মামলা ৪০০০
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান তিন মামলার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরা হচ্ছে মামলা ৪০০০’কে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী শাওল এলোভিচের সঙ্গে মিলে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসরাইলের যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে এলোভিচকে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির বদলে সরকারি সুবিধা দিয়েছেন তিনি। বদলে এলোভিচকে স্থানীয় নিউজ ওয়েবসাইট ‘ওয়ালা নিউজ’-এ নিজের সমর্থনে খবর প্রকাশের জন্য অনুরোধ করেছিলেন নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী। নেতানিয়াহুর দাবি পূরণে ওয়েবসাইটটির সম্পাদকদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে এলোভিচের বিরুদ্ধে।

মামলা ২০০০
মামলা ২০০০ গঠন করা হয়েছে নেতানিয়াহু ও স্থানীয় পত্রিকা ইয়েডিয়থ আহরনথ’র প্রকাশক আরনন মোজেসের মধ্যকার বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত বৈঠক নিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে ওইসব বৈঠকে একটি ঘুষ আদান-প্রদান চুক্তি নিয়ে আলোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ অনুসারে, নেতানিয়াহুকে প্রতিদ্বন্দ্বী পত্রিকা ইসরাইল হায়োম’র সার্কুলেশন কমাতে অনুরোধ করেছিলেন মোজেস। বদলে নেতানিয়াহুর পক্ষে সংবাদ প্রচারের প্রতিশ্রুতি করেছিলেন তিনি। এই মামলার, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলা ১০০০
মামলা ১০০০-এ জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুসারে, হলিউড মোগল অ্যারন মিলচান ও বিলিয়নার জেমস প্যাকারের কাছ থেকে দামি উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন নেতানিয়াহু। এসব উপঢৌকনের মধ্যে রয়েছে দামি সিগার ও শ্যাম্পেইন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে উপহার হিসেবে এসব পণ্য গ্রহণ করেছেন তিনি। তার পাশাপাশি তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উপঢৌকন দাবি করেছেন। এ বিষয়ে তিনি জ্ঞাত ছিলেন। ম্যান্ডেলব্লিট জানান, উপহার নিতে নিজের পদ ব্যবহার করেছেন নেতানিয়াহু। এতে স্বার্থের সংঘাত সংঘটিত হয়েছে।

এমজে/