বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষ লকডাউনে

বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষ লকডাউনে

ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে ওঠা মহামারি করোনা ভাইরাসে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষ লকডাউনের কবলে। ভাইরাসের বিস্তার রোধে দশটিরও বেশি দেশ লকডাউন ঘোষণা করেছে। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ লকডাউনের শিকার। বিশেষ করে গরীব মানুষের বিপদ বাড়ছে।

গতকাল চীনের মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাড়িয়েছে স্পেনও। মৃতের সংখ্যায় কোভিড-১৯ ইতালিকে এক নম্বরে নিয়ে গেছে। নিউ ইয়র্কে বুলেট ট্রেনের গতিতে সংক্রমণের হার বাড়ছে। তবুও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১২ এপ্রিলের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় শুরুর আশা করেছেন। ব্রিটিশ সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে সহায়তা দিতে ২ লাখ ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিচ্ছে।

দেশে দেশে লকডাউন: বিশ্বে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের বাস। ভারত তার ১৩০ কোটি মানুষকে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে তিন সপ্তাহের লকডাউনে রেখেছে। ব্রিটেনও তার প্রায় ৭ কোটি মানুষকে লকডাউনের আওতায় নিয়ে এসেছে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জর্ডান, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন লকডাউন দিয়েছে। সৌদি আরব তার রাজধানী ও দুইটি পবিত্র শহরে লকডাউন ঘোষণা করেছে। কলম্বিয়া তার ৭০ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সীদের মে মাস পর্যন্ত বাইরে বের হতে নিষেধ করেছে। জার্মানি, মালয়েশিয়া, ইসরাইল ও অস্ট্রেলিয়া আংশিক লকডাউন কার্যকর করছে।

চীনকে ছাড়াল স্পেনও: বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু ১৯ হাজার ৬৪৩ এবং আক্রান্ত ৪ লাখ ৩৬ হাজার জনের বেশি। ইতালির পর ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন এখন করোনায় বিপর্যস্ত। মৃতের সংখ্যায় চীনকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে দেশটি। স্পেনে পরপর দুই দিন ব্যাপকসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৭৩৮ জনের মৃত্যুতে মোট সংখ্যা ৩ হাজার ৪৩৪ জন এবং আক্রান্ত ৪৭ হাজার ৬১০ জন। দেশটি ৪৬৭ মিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনেছে।

দেশটি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর কাছেও মানবিক সহায়তা চেয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমেছে। চীনে মারা যায় ৩ হাজার ২৮১ জন। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ৮২০। আর আক্রান্ত ৬৯ হাজার ১৭৬ জন। এছাড়া ইরানে আক্রান্ত ২৭ হাজার ১৭ জনের মধ্যে ২ হাজার ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৫৫ হাজার ২২৫ জনের মধ্যে ৮০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সংক্রমণের নতুন কেন্দ্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ১২ এপ্রিল ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করার আশা করছেন তখন এমন হুঁশিয়ারি আসল। নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার রাজ্যে সংক্রমণ বুলেট ট্রেনের চেয়েও বেশি গতিতে ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, আক্রান্ত আশঙ্কার চেয়েও বেশি। এমন অবস্থায় চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে কুমো অভিযোগ করেন, সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কোনো রাজ্যেই পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে না। নিউ ইয়র্কে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং ২১০ জন মারা গেছে। ব্রিটেনে আড়াই লাখ স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে সহায়তা করবে এই দুর্যোগের সময়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার নতুন করে ৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। পাকিস্তানে আক্রান্ত ১ হাজার। এরই মধ্যে সাত জন মারা গেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫১৬ জনে। —বিজনেস ইনসাইডার, আল-জাজিরা ও বিবিসি

এমজে/