বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৪ জনের মৃত্যু

বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৪ জনের মৃত্যু

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল ফ্রান্স। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৩৫৫ জন। আর মোট মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে পাঁচ হাজার। ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই করোনায় বিপর্যস্ত। শুক্রবার বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি।

এদিকে একদিনে ৯ ঘণ্টার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৫০ জন আক্রান্ত ও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া সিঙ্গাপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশটিতে এক মাসের লকডাউন জারি করা হয়েছে। লকডাউনের কারণে ভেঙে পড়ছে স্পেনের অর্থনীতি। ইতোমধ্যে দেশটিতে ৯ লাখ লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল এখনও ইউরোপ। যদিও ধীরে ধীরে সেই কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্র। মৃত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে প্রথম দুটি দেশই ইউরোপের। সবার ওপরে আছে ইতালি, তারপর স্পেন। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী- ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে ৬৬ হাজার ৫ জন। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৮১ হাজার ৭০ জন। বিশ্বে মোট সুস্থ হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৬৮৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে ৪ হাজার ৯৫৬ জন মারা গেছে। আর বিশ্বে মোট মারা গেছে ৫৮ হাজার ১২৩ জন।

ইতালিতে ২৪ ঘণ্টায় ৭৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৬৮১ জনের। স্পেনে ২৪ ঘণ্টায় ৫৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৯৩৫ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবার ৭৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৭৯৯ জন। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে মোট ৬ হাজার ৫০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে শুক্রবার ১ হাজার ১২০ ও বৃহস্পতিবার ১৩৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী প্রতি মিনিটে ৫০ জন আক্রান্ত এবং ৪ জনের মৃত্যু হচ্ছে। ২৯ মার্চ দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য বিশ্লেষণে এ সংখ্যা জানা গেছে।

ডেইলি মেইল ও পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন ৯ ঘণ্টায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ১৪৪ জনের। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে ৪ জন মারা গেছেন। এছাড়া দুপুর ১টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯০ জন। ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৪৯৪ জন। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ জন।

তবে করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্তের সংখ্যার দিক দিয়ে এখন শীর্ষস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ১৯১ জন। এরপরই আছে ইতালি, দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৭ জন। স্পেনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৭১০ জন, জার্মানিতে ৮৯ হাজার ৮৩৮ জন, চীনে ৮১ হাজার ৬২০ জন, ফ্রান্সে ৬৪ হাজার ৩৩৮ জন এবং ইরানে ৫৩ হাজার ১৮৩ জন।

সুস্থ হওয়ার সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে চীন। চীনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৬ হাজার ৫৭১ জন। স্পেনে সুস্থ হয়েছেন ৩০ হাজার ৫১৩ জন। জার্মানিতে ২৪ হাজার ৫৭৫ জন, ইতালিতে ১৮ হাজার ৭৫৮ ও ইরানে ১৭ হাজার ৯৩৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

এদিকে স্পেনে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কঠোর লকডাউন পদক্ষেপ নেয়ায় এ পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিবিসি জানায়, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই স্পেনে লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য। তারপরও দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকার পাশাপাশি অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ১১৬৯ মৃত্যু : করোনাভাইরাস মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন মারা গেছেন ১০৪৯ জন। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ এখন ‘ঘরবন্দি’। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘরের বাইরে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

দেশটিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কেবল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যেই মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার। আক্রান্ত ও মৃত্যু বিবেচনায় পরের অঙ্গরাজ্যগুলো হচ্ছে নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান ও লুইজিয়ানা। এদিকে দ্বিতীয়বারের পরীক্ষায়ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করোনা নেগেটিভ এসেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ভারত : করোনাভাইরাস মহামারীর শিকার দেশগুলোর মধ্য উত্থান-পতন থেমে নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবার পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে গেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভারতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৫৬৭ জনের। আর পাকিস্তানে রোগী আছে ২ হাজার ৬৩৭ জন। একদিন আগেও পাকিস্তান ছিল শীর্ষে। ভারতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। অন্যদিকে পাকিস্তানে মারা গেছেন ৪০ জন।

সিঙ্গাপুরে এক মাসের লকডাউন : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কেবল জরুরি সেবা ছাড়া স্কুলসহ বেশিরভাগ অফিস-আদালত এক মাসের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্গাপুর। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হবে এ লকডাউন। স্কুলগুলো বন্ধ হলেও অনলাইন ক্লাস চলবে ৮ এপ্রিল থেকে।

শুক্রবার এক ঘোষণায় এ কথা জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। লি বলেন, সিঙ্গাপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার বাড়ছে। আগে যেখানে দিনে ১০ জনেরও কম মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিল এখন সেখানে দিনেই ৫০ জনের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

ঊর্ধ্বতনদের সতর্ক করা মার্কিন রণতরীর কমান্ডার বরখাস্ত : করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে নাবিকদের বাঁচাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরীর এক কমান্ডারকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত নৌমন্ত্রী থমাস মোডলি এক ঘোষণায় ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট থেকে ক্যাপ্টেন ব্রেট ক্রোজিয়ারকে প্রত্যাহার করে নেন। বিমানবাহী ওই রণতরীটির শতাধিক আরোহীর দেহে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো।

পাকিস্তানে শুক্রবারের নামাজ ঠেকাতে কারফিউ : পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিন্ধু প্রদেশ করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে শুক্রবারের জুমার নামাজ পড়া ঠেকাতে কারফিউ জারি করেছে। তিন ঘণ্টার জন্য এ কারফিউ জারি করা হয়।

নামাজে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে সরকারি সতর্কতা জারি থাকার পরও গেল শুক্রবার বহু মানুষ মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে অংশ নেয়ায় এবার এ কড়াকড়ির পদক্ষেপ নেয়া হয়।

এমজে/