করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ৮৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর পাহাড়ে দাঁড়িয়ে এখন বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে আরেক দফা ব্যয়বহুল নাগরিক সহযোগিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আইনপ্রণেতাদের বিভক্তি চরমে উঠেছে।
১৫ মে ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের আরেক দফা করোনাভাইরাস বিল গৃহীত হয়েছে। উচ্চাবিলাসী এ বিল কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নাকচ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকার অবস্থা এখন এতই নাজুক যে আইনপ্রণেতারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, কোন পথে যাবেন। উদারনৈতিক ডেমোক্রেটরা মনে করছেন, আরও বর্ধিত নাগরিক সুবিধা দেওয়া হোক। কিছুটা রক্ষণশীল ডেমোক্রেটরা মনে করছেন, নাগরিক সহযোগিতার প্রস্তাব এর মধ্যেই বেশি উদার হয়ে গেছে। কিছু রিপাবলিকান চাচ্ছেন, সীমিত হলেও আরেক দফা ফেডারেল সহযোগিতা দেওয়া হোক। রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা মনে করেন, এখনই আর সহযোগিতা দেওয়া ঠিক হবে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে চান এসব আইনপ্রণেতারা।
লকডাউনে থাকা রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইনপ্রণেতাদের উপস্থিতি ছিল এক ভিন্ন পরিবেশে। মাস্ক পরার কারনে চেহারা দেখে আঁচ করার উপায় ছিল না, কে কতটা উদ্বিগ্ন। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো আইনপ্রণেতাদের সমাবেশ ঘটেছিলো ওয়াশিংটন ডিসিতে।
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান গ্রেগ ওয়াল্ডেন বলেছেন, আশাবাদের অনেক লক্ষণই আছে, তবে আমরা এখনো সংকটের গভীরতা সম্পর্কে জানি না। বিশ্বাস করি, আমেরিকা এ নাজুক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত নই, কতদিনে তা হতে পারে।
উদারনৈতিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার নতুন নাগরিক সহযোগিতার আইন প্রস্তাবে নিজের দলের সবাইকেও ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। ২০৮-১৯৯ ভোটে পাস হওয়া এ প্রস্তাবে মধ্যপন্থী ডেমোক্রেটরাও সমর্থন করেননি। ১৮ জন ডেমোক্রেটই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রিপাবলিকান দলের মাত্র একজন প্রতিনিধি, নিউইয়র্কের পিটার কিং প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে নাগরিকদের জন্য মাসে ১২০০ ডলার করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা সর্বোচ্চ ছয় হাজার ডলার পর্যন্ত। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত বেকার ভাতার মেয়াদ বৃদ্ধিসহ শিক্ষা ঋণ মওকুফ, ভাড়াটে ও বাড়ির মালিকদের প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বলা আছে। এ ছাড়া নগর ও পৌর কর্তৃপক্ষের জন্য অনুদান, ফুড স্ট্যাম্প সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কর্মজীবীদের জন্য আর্থিক সুবিধাসহ তিন ট্রিলিয়ন ডলারের এ অর্থ প্রস্তাবকে অতি উদারনৈতিক বলে রিপাবলিকানরা উড়িয়ে দিচ্ছেন। এ আইন প্রস্তাবে নথিপত্রহীন অভিবাসী, যারা ট্যাক্স দিয়েছেন তাঁদেরও সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামনে আমেরিকার মেমোরিয়েল ডে। এরপর আইনপ্রণেতারা আবার ফিরবেন ওয়াশিংটনে। সিনেটের প্রথম সভাতেই এ নিয়ে আলোচনা করার আশা করা হলেও রিপাবলিকান মহল থেকে কোন সবুজ সংকেত এখনই দেখা যাচ্ছে না। যদিও দেন দরবার করে মাঝামাঝি আরেকটি নাগরিক প্রণোদনার ব্যাপারে অনেকই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। চলতি অর্থ বছরে আমেরিকার বার্ষিক ঘাটতি চার ট্রিলিয়ন ডলারের হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি পাঁচজন আমেরিকানের মধ্যে একজন কর্মহীন। ধাপে ধাপে ব্যবসা বাণিজ্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সিনেটে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল আগেই বলেছেন, ব্যয় সামাল দিতে পারা রাজ্যগুলো নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে। তিনি দ্রুত আর কোনো নাগরিক সযোগিতা না দেওয়ার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। যদিও ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ তাঁরা মনে করেন, আরেকটি নাগরিক সহযোগিতা আইন আসতে পারে। তবে তা এখনই নয় এবং ডেমোক্রেটদের প্রস্তাবিত নাগরিক সহযোগিতার আইন প্রস্তাবকে হাস্যকর বলে তিনি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন।সূত্র : প্রথম আলো
এমজে/