পুতিনের কাছে ‘হীরক রাজা’ও ফেল

পুতিনের কাছে ‘হীরক রাজা’ও ফেল

সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্রের শেষে হীরক রাজার মূর্তি ভেঙে ফেলার দৃশ্য রয়েছে৷ কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভাগ্যে যেন তেমনটা না ঘটে, সেই ব্যবস্থা হচ্ছে৷

মাঝে বছর চারেক বাদ দিলে ২০০০ সাল থেকে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন পুটিন৷ বর্তমান আইন অনুযায়ী, ২০২৪ সালেই তাঁর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা৷ এরপর আর চাইলেও প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না তিনি৷

কিন্তু পুতিন চিন্তা করে দেখলেন ২০২৪ সালে তার বয়স হবে ৭২৷ এখন তার যে স্বাস্থ্য, তাতে ঐ সময়ও তার যথেষ্ট প্রাণশক্তি থাকার কথা৷ ফলে তখন অবসরে না গিয়ে আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকতে সংবিধানে পরিবর্তন আনার বু্দ্ধি এঁটেছেন তিনি৷

এই পরিবর্তনের কারণে ছয় বছর করে আরও দুই মেয়াদ প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন তিনি৷ অর্থাৎ ৮৪ বছর বয়স পর্যন্ত৷

সংবিধানে এই পরিবর্তন আনতেই বৃহস্পতিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী ভোটের আয়োজন করা হয়েছে রাশিয়ায়৷

পুটিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৫ সালে৷ আশির দশকে তিনি কেজিবি এজেন্ট হিসেবে জার্মানির ড্রেসডেনে কর্মরত ছিলেন৷ বার্লিন ওয়ালের পতনের পর রাশিয়ায় ফিরে গিয়ে বরিস ইয়েলৎসিনের ক্রেমলিনে প্রবেশ করেন তিনি৷ ইয়েলৎসিন তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে পুটিনের নাম ঘোষণা করলে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়৷

ভোটাররা যদি পুটিনের এমন পরিবর্তন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন তাহলে সেটাই হবে ‘বিশাল অবাক করা’ ব্যাপার৷ ফলে ধরে নেয়া যায় সংবিধানে পরিবর্তন আসছেই৷

সংবিধানে সম্ভাব্য পরিবর্তনের কারণে পুটিনের পক্ষে যে শুধু আরও বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে তাই নয়, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও বাড়বে৷ চলুন দেখে নিই তিনি কী কী করতে পারবেন:

তিনি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন৷ এখন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ পেতে সংসদের সমর্থন প্রয়োজন হয়৷ তবে প্রস্তাবিত সংশোধন বলছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট যে নাম প্রস্তাব করবেন, তা সংসদের নিম্নকক্ষ ডুমা টানা তিনবার বাতিল করে দিলেও প্রেসিডেন্ট তার পছন্দের প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন৷ এরজন্য প্রেসিডেন্টকে নতুন করে সংসদ নির্বাচন আয়োজনেরও ডাক দিতে হবে না৷

মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত না করেই প্রধানমন্ত্রী পদে পরিবর্তন আনতে পারবেন৷

সাংবিধানিক ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের হটিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও পাবেন প্রেসিডেন্ট৷ অবশ্য এর জন্য সংসদের উচ্চকক্ষ ‘ফেডারেল কাউন্সিল’-এর অনুমোদন লাগবে৷ তবে এটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, কারণ ফেডারেল কাউন্সিলের সদস্য নিয়োগের ক্ষমতাও আছে প্রেসিডেন্টের৷ এর মধ্যে সাত সদস্য আবার আজীবন নিয়োগ পেয়ে থাকেন৷

এবার ফিরে আসি শুরুর কথায়৷ বলছিলাম হীরক রাজাও পুটিনের কাছে ফেল করবে৷ কারণ পুটিন এমন ব্যবস্থা করছেন যার ফলে দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়ার পরও তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না৷

সেটা কীভাবে? প্রেসিডেন্ট থাকার কারণে পুটিন দায়িত্ব শেষে ফেডারেল কাউন্সিলের আজীবন সদস্য হতে পারবেন৷ আর সেটা হলেই তিনি ‘ইমিউনিটি’ পেয়ে যাবেন৷ অর্থাৎ তাকে আর ধরা যাবে না ৷

এমজে/