রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: ‘দ্রুত’ কথাটির ব্যবহার নিয়ে ঢাকা-দিল্লির দ্বৈরথ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: ‘দ্রুত’ কথাটির ব্যবহার নিয়ে ঢাকা-দিল্লির দ্বৈরথ

ঢাকা বলেছিল, ভারত ‘দ্রুত’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে সমর্থন করছে। এখন দিল্লির দাবি, কথাটি ঠিক এভাবে তারা বলেনি। বুধবার এই খবর দিয়েছে দ্যা হিন্দু।

ওই খবর অনুযায়ী, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নন–পারমানেন্ট সদস্য পদে ভারতের প্রার্থীতাকে সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ। এটা ২০২১–২০২২ মেয়াদের জন্য। গত ২ জুলাই এজন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাতেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর চিঠি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মোমেনকে। এই চিঠিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি উল্লিখিত হয়। দ্যা হিন্দুর প্রতিবেদনটির অবিকল তর্জমা নিচে তুলে ধরা হলো।

ঢাকা দাবি করেছে যে, নয়াদিল্লি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ‘দ্রুত’ (ফাস্ট) প্রত্যাবাসনকে সমর্থন করছে।বাংলাদেশ বুধবার দাবি করেছে যে, ভারত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের
ফাস্ট প্রত্যাবাসনকে সমর্থন দিচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে লেখা চিঠিতে ওই কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এদিকে ড. জয়শংকর তার চিঠিতে বলেছিলেন, ‘ভারত এটা বুঝতে পারছে যে, এই ইস্যুটি একটি জরুরি বিষয় এবং রাখাইন থেকে স্থানচ্যুত হওয়া ব্যক্তিদের একটি আগাম, নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সকলের অভিন্ন স্বার্থ জড়িত রয়েছে।’

ভারতীয় মন্ত্রীর চিঠির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের জারি করা দুটি বাংলা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, ভারত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দ্রুত ( হিন্দুর ইংরেজি রিপোর্টে এখানে বাংলায় 'দ্রুত' শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে ) প্রত্যাবাসন সমর্থন করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে ওই একই ‘দ্রুত’ প্রত্যাবাসনে ভারতের সমর্থনের কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে।

ডঃ জয়শঙ্করের চিঠির ব্যাখ্যা করার একটি তাৎপর্য রয়েছে। কারণ সম্প্রতি ভারত ঢাকায় সমালোচনার সম্মুখীন হয়। তার কারণ হলো স্থানচ্যুত রোহিঙ্গাদের গ্রহণে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে বাংলাদেশকে বৃহত্তর সমর্থন না দেয়ার কারণে ঢাকায় ভারত সমালোচিত হয়েছে। লাদাখে ভারত–চীন উত্তেজনার পটভূমিতে অনুষ্ঠিত বিতর্কে ঢাকা এবং দিল্লির মধ্যকার সম্পর্কের কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস করা হয় এবং এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিজের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। এটা উল্লেখ করা হয় যে, মিয়ানমার চীনের সমর্থন ভোগ করছে এবং সেই কারণে ভারতীয় আশ্বাস সত্ত্বেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদেরকে তাদের আবাসভূমিতে ফেরত পাঠাতে বাধ্য করতে পারছে না।

ভারত রোহিঙ্গাদেরকে ‘পিপল অব রাখাইন’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে । আর এতে ভারতের তরফে অধিকতর নিরপেক্ষতা বজায় রাখার অঙ্গিকারেরই প্রতিফলন ঘটে। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভিযান পরিচালনাকালে ১২ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছিল। সেই সময় থেকে তাদের উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় অবস্থান করছে।

ভারত মিয়ানমার সম্পর্ক
মিয়ানমারের নেতৃবৃন্দ রাখাইনের জনগণকে বোঝাতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে জটিলতার মুখোমুখি হন। এটা বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা গিয়েছে, যখন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসের শুনানিকালে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সূচি রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ওই সময়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে যখন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে, সেই সময়ে ভারত মিয়ানমার সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এরসঙ্গে ক্রমবর্ধমান স্ট্রেটেজিক এবং সামরিক বিষয়ের যোগসূত্র রয়েছে।

মি. জয়শঙকর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গত ২ জুলাই একটি চিঠি লিখেছিলেন। ২০২১–২০২২ সালের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য প্রার্থীতাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি ওই চিঠি লিখেছিলেন।