ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসেই ভরসা বাইডেনের

ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসেই ভরসা বাইডেনের

বিশেষ সংবাদদাতা

বিশ্বের দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে যখন দেশটির ভিতর আর বাহিরে চলছে নানান হিসেব নিকেষ তখনি সবাইকে চমকে দিলেন ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির দ্বিতীয় শীর্ষ পদে লড়তে বেছে নিয়েছেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এক নারীকে। অনেক জল্পনা আর পর্যালোচনা শেষে মঙ্গলবার রানিংমেট হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণা করেন জো বাইডেন।

রানিংমেট হিসেবে কমলা হ্যারিসেই নিজের আস্থার কথা জানান দিয়ে এক টুইট বার্তায় বলেন, "২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে ট্রাম্প এবং মাইক পেন্সের সঙ্গে নির্বাচনে লড়তে হ্যারিসকে বাছাই করেছি। এ লড়াইয়ের জন্য তাকেই সেরা মনে হয়েছে।"

নিজের রানিংমেট হিসেবে একজন নারীকে বাছাই এমন প্রতিজ্ঞা বেশ আগেই করেছিলেন বাইডেন। জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস ডেলাওয়ারা অঙ্গরাজ্য থেকে তাদের প্রথম যৌথ প্রচারণা শুরু করবেন।

৫৫ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস হলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় নারী যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন। তার আগে একই পদে ১৯৮৪ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসবে গেরালডাইন ফেরারো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালে মাঠে নামেন সারাহ পলিন।

বয়সের দিক বিবেচনায় নিজের চাইতে ২০ বছর জুনিয়র একজনকে বাছাই করার কারণ হিসেবে বাইডেন বলেন, "ক্যামিল হ্যারিসকে বাছাই করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা হলো।"

ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত হওয়ার পর কমলা হ্যারিস এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, "জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে একীভূত করতে পারবেন কারণ তিনি আমাদের জন্য লড়াই করেই জীবন কাটিয়েছেন। এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি এমন একটি দেশ তৈরি করবেন; যা আমাদের আদর্শ অনুসারে চলবে"।

বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরও লিখেছেন, "ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের আমাদের দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তার সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি সম্মানিত, এবং তাকে আমাদের সর্বাধিনায়ক হওয়ার জন্য যা করতে হবে তা করার জন্য আমি সম্মানিত"।

রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই আইনজীবী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন কমলা হ্যারিস। তাকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উদারনৈতিক পক্ষের সঙ্গে বনেদি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে একটা যোগসূত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক নাগরিক আন্দোলনের সময়েও তাকে অগ্রভাগে দেখা গেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, রানিংমেট নির্বাচনের ক্ষেত্রে জীবনের বেশিরভাগ সময় কৌসুলি হিসেবে কাটানো উদারনৈতিক ডেমোক্র্যাট হিসেবে পরিচিত কমলাই ছিলেন বাইডেনের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পছন্দ। ডেমোক্র্যাটিক এস্টাবলিশমেন্টের একজন বিশ্বাসযোগ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে।

বাইডেন কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণা করার পরপরই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন থেকে শুরু করে গত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। কমলার প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তাকে অভিনন্দিত করেছেন।

একনজরে কমলা হ্যারিস

কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় মিশ্র বর্ণের কমলা হ্যারিস (৫৫) মার্কিন সিনেটে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা জামাইকান ও মা ভারতীয়। প্রথমবারের মতো একজন কৃষ্ণাঙ্গ ও একইসঙ্গে ভারতীয় হিসেবে এই পদে তিনি মনোনীত হলেন।

কমলার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাঁর মা শ্যামলা গোপালন ছিলেন ও ক্যানসার গবেষক। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিসের জন্ম জ্যামাইকায়। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। খুব কম বয়সেই কমলার মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। তিনি হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৩ সালে হ্যারিস প্রথমবার নির্বাচনে জেতেন এবং সেন্ট ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নির্বাচিত হন। তিনি ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন।

সান ফ্রান্সিস্কোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও ক্যালিফর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে থাকাকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান সমালোচক ছিলেন কমলা। গত বছরে একটা সময় কমলা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার লড়াইয়েও ছিলেন। কিন্তু ডেমোক্রেটদের পার্টির অন্দরের লড়াইয়ে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তিনি।

দুই বছরের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করার সময় হ্যারিস ডেমোক্রেটিক পার্টির উঠতি তারকা হিসেবে সম্মান অর্জন করেন। ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র ইউএস সিনেটর নির্বাচনে বাজিমাত করেন। বিতর্কে ঝানু কমলা হ্যারিসকে ডেমোক্রেটিক পার্টির উদারনৈতিক পক্ষের সঙ্গে বনেদিদের মধ্যে একটা যোগসূত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক নাগরিক আন্দোলনের সময়ে কমলা হ্যারিসকে অগ্রভাগে দেখা গেছে। এসব বিবেচনায় কমলা হ্যারিসই জো বাইডেনের রানিং মেট হিসেবে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন।

এসজে/