ফ্রান্সে ফের লকডাউন, ইংল্যান্ডে দিনে আক্রান্ত ১ লাখ, ইউরোপে শেয়ার বাজারে পতন

ফ্রান্সে ফের লকডাউন, ইংল্যান্ডে দিনে আক্রান্ত ১ লাখ, ইউরোপে শেয়ার বাজারে পতন

ফ্রান্সে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। কমপক্ষে নভেম্বরের শেষ নাগাদ তা স্থায়ী হবে। এ ঘোষণা দিয়ে ম্যাক্রন বলেছেন, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনে জনগণ শুধু চিকিৎসার প্রয়োজন ও অত্যাবশ্যকীয় কারণ ছাড়া বাইরে যেতে পারবে না। অত্যাবশ্যকীয় বাণিজ্য, যেমন রেস্তোরাঁ বার বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে স্কুল ও কলকারখানা। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, এপ্রিলের পর ফ্রান্সে করোনায় মৃত্যু রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার মানুষ। অন্যদিকে জার্মানিও জরুরি লকডাউন দিতে যাচ্ছে।

তবে তা ফ্রান্সের মতো কঠোর হবে না। এর অধীনে সেখানে রেস্তোরাঁ, জিম এবং থিয়েটার বন্ধ থাকবে। শুধু ফ্রান্স বা জার্মানি নয়, পুরো ইউরোপেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার বৃটেনে নতুন করে ৩১০ জন মারা যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২৪ হাজার ৭০১ জন। অন্যদিকে ইংল্যান্ডে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি দিন সেখানে প্রকৃতপক্ষে এক লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

গবেষকরা বলেছেন, এই ধারার পরিবর্তন আনতে হবে। বেশ কিছু দেশে জারি রয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ। এর আওতায় রয়েছেন ফ্রান্সের ৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। নতুন নতুন সংক্রমণের খবরে ইউরোপের অর্থনীতির দ্রুত অবনমন হয়েছে। বুধবার সেখানকার শেয়ার বাজারের মারাত্মক পতন হয়েছে। বৃটেনের এফটিএসই ১০০ তার ব্যবসা বন্ধ করেছে শতকরা ২.৬ ভাগ কম দামে। জার্মানির ড্যাক্স-এর শেয়ার পড়ে গেছে শতকরা ৪.২ ভাগে। যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সূচকেরও বড় পরিবর্তন হয়েছে। এগুলোর দাম শতকরা ৩.৪ ভাগ বা তারও বেশি পতন হয়েছে।

ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, আমরা দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের একেবারে গভীরে আছি। মনে হচ্ছে এ বছরের বড়দিনও পালিত হবে ভিন্নভাবে।

এ অবস্থায় বুধবার জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি বলেছেন, ফ্রান্সকে এখন নিষ্ঠুরভাবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। মহামারিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে এসব করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস এমন গতিতে বিস্তার হচ্ছে যে, তা পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে। ফ্রান্সের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডগুলোর অর্ধেক এরই মধ্যে করোনা রোগিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই নতুন লকডাউনের অধীনে লোকজনকে ঘর থেকে বের হতে হলে একটি ফরম পূরণ করতে হবে, যেমনটা মার্চে লকডাউনের সময় করা হয়েছিল। এ সময়ে সামাজিক সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

তবে প্রথম লকডাউনের চেয়ে এবার কিছুটা ব্যতিক্রম থাকবে। যেমন মার্চের লকডাউনে দু’মাস ধরে কেয়ার হোমে থাকা বৃদ্ধদের দেখতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল। তবে এবার সেই বিধিনিষেধ নেই। বলা হয়েছে, নতুন এই বিধিনিষেধ কমপক্ষে ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। দু’ সপ্তাহ পর পর পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হবে। উল্লেখ্য, ফ্রান্সে বর্তমানে নতুন ৫০ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন বলে রিপোর্ট করা হচ্ছে। এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। প্যারিসে বর্তমানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগিদের জন্য যে পরিমাণ বেড আছে, এরই মধ্যে তার শতকরা ৭০ ভাগ রোগিতে পূর্ণ।

বুধবার ইমানুয়েল ম্যাক্রন লকডাউন ঘোষণা করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর বড় প্রভাব পড়বে। যেমন বিনোদন খাত এবং সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান। ফরাসি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ম্যাক্রন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি। পুরো বছরে সরকারের জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা ১০ ভাগ কম হবে বলে পূর্বাভাষ দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল বলেছেন, তার দেশকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার রোধে বড় ধরনের জাতীয় প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইউরোপের অন্য স্থানগুলোর চেয়ে জার্মানিতে আক্রান্তের হার কম। তবে তাই বলে চুপ করে থাকেনি মার্কেলের জার্মানি। ইউরোপের দেশগুলোতে গত কয়েক সপ্তাহে যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তা ভাবিয়ে তুলেছে বার্লিনকে। ফলে ২রা নভেম্বর থেকে জার্মানিতে আংশিক লকডাউন আরোপ হতে যাচ্ছে। তার দেশের ১৬টি রাজ্যের প্রধানদের সঙ্গে অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ লকডাউনে দুটি বাড়ির মধ্যে আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ ১০ জন উপস্থিত থাকতে পারবেন। খোলা থাকবে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন। বন্ধ থাকবে পর্যটন, বার। রেস্তোরাঁ খোলা যাবে সীমিত পরিসরে। ট্যাট্টু ও ম্যাসাজ পার্লার বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি যাচাই করে ১১ই নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্স করার কথা রয়েছে মার্কেলের।

এমজে/