যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

তিন কোটি ল্যাটিনো দুই কোটি অভিবাসীর হাতে ৫ রাজ্যের ইলেক্টোরাল

তিন কোটি ল্যাটিনো দুই কোটি অভিবাসীর হাতে ৫ রাজ্যের ইলেক্টোরাল

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ল্যাটিনো ও অভিবাসী ভোটাররা। এমনকি অন্তত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জয়-পরাজয়ের নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতেই। রাজ্যগুলো হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক ও অ্যারিজোনা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের অর্ধেকের বেশিই (১৬৪টি) রয়েছে এই পাঁচটি রাজ্যে। ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক বাদে বাকি ৩টি রাজ্যকে দোদুল্যমান বা সুইং স্টেট। রাজ্যগুলোর জয় নিশ্চিত করতে মরিয়া রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় দলই।

শেষবারের মতো ঝটিকা প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিরোধী প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে এসব রাজ্যে ল্যাটিনো ও অভিবাসী ভোটারদের বেশির ভাগই গতবারের (প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৬) মতো এবারও বিরোধী দিকেই ডেমোক্রেটিক পার্টির দিকেই ঝুঁকছে। যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি জাতিগত বা নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রয়েছে।

শ্বেতাঙ্গ বা সাদা চামড়ার ভোটারই সবচেয়ে বেশি (৬৭ শতাংশ)। কৃষ্ণাঙ্গ বা কালো ভোটার ৩৩ শতাংশ। সাদারা সাধারণত রিপাবলিকানদের ভোট দেয়। আর কালোরা ডেমোক্র্যাটদের। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবারই প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বড় জাতিগত বা নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু হিসেবে হাজির হচ্ছে ল্যাটিনোরা। এদেরকে হিস্পানিকও বলা হয়। হিস্পানিক বলতে ইউরোপের স্পেন, স্প্যানিশ ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হয়ে থাকে। আর ল্যাটিনো বলতে ল্যাটিন বা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ মেক্সিকো, পেরু, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বোঝায়। এই কয়টি দেশের ভাষাই স্প্যানিশ। যুক্তরাষ্ট্রে হিস্পানিক ও ল্যাটিনো বলতে স্প্যানিশ ভাষী উল্লিখিত দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদেরকে নির্দেশ করা হয়। হিস্পানিক-ল্যাটিনোদের উত্তরসূরিদেরও একই নামে ডাকা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৩ কোটি জনসংখ্যার ৬ কোটিই ল্যাটিনো। শতকরা হিসেবে প্রায় ১৬.৭ শতাংশ। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় ল্যাটিনো ভোটার সংখ্যা কম। এবার নির্বাচনে ২৪ কোটি মোট নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ল্যাটিনো ভোট তিন কোটি ২০ লাখের মতো। শতকরা হিসেবে মোট ভোটের ১৩.৩ ভাগ তারাই। কম-বেশি যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যেই তাদের বাস। তবে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি রাজ্যে তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

আর এই রাজ্যগুলোর ইলেক্টোরাল ভোটগুলো মূলত তাদেরই হাতে। পিউ রিসার্চের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, এবার ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক ও অ্যারিজোনা- পাঁচ রাজ্যে প্রতি তিন ল্যাটিনোর দু’জনই ভোটার। এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়াতেই রয়েছে ৭৯ লাখ ল্যাটিনো ভোটার; রাজ্যের মোট ভোটারের প্রায় ৩০ শতাংশ। টেক্সাস ও ফ্লোরিডায় যথাক্রমে ৫৬ লাখ (রাজ্যের মোট ভোটারের ৩০ শতাংশ) ও ৩১ লাখ (রাজ্যের মোট ভোটারের ২০ শতাংশ)। আর নিউইয়র্কে ২০ লাখ ও অ্যারিজোনায় ১২ লাখ।

পিউ রিসার্চের জরিপ মতে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৬২ শতাংশ ল্যাটিনো ভোটার বাইডেনকে ভোট দেয়ার পক্ষে। বাইডেনের মূল ইস্যুগুলোতে একমত পোষণ করছে তারা। অন্যদিকে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে ল্যাটিনোদের আগ্রহ কম। তার পরও ২০১৬ সালের তুলনায় ট্রাম্পের সমর্থন ২ শতাংশ বেড়েছে। ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে ল্যাটিনো-হিস্পানিক ভোটার সবচেয়ে বেশি। এই দুটি ঝুলন্ত রাজ্যে ল্যাটিনো-হিস্পানিক ভোটাররাই জয়-পরাজয়ে নিয়ন্তা হিসেবে কাজ করবে।

ফ্লোরিডায় মোট নিবন্ধনকৃত ভোটারের মধ্যে অভিবাসী ভোটারের ৫৪ শতাংশই হিস্পানিক। অন্যদিকে টেক্সাসে মোট ভোটারের ৫২ শতাংশ হিস্পানিক/ল্যাটিনো ভোটার। এই রাজ্যগুলোতে অভিবাসী ভোটারেরও সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। এই সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। উপরোক্ত পাঁচ রাজ্যের মধ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট সবচেয়ে বেশি ক্যালিফোর্নিয়াতে (৫৫টি)। টেক্সাসে ৩৮টি, ফ্লোরিডা ও নিউইয়র্কে ২৯টি করে।

আর অ্যারিজোনায় ১১টি। মোট ১৬৪টি। আর এ কারণেই এই রাজ্যগুলোতে হিস্পানিক/ল্যাটিনো ভোট টানার ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প ও বাইডেন। ভোটারদের উদ্দেশ্যে উভয় শিবিরই স্প্যানিশ ভাষায় একাধিক বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।

এমজে/