‘বিপজ্জনক’ রাশিয়ার ব্যাপারে সতর্ক করলেন বরখাস্ত টিলারসন

‘বিপজ্জনক’ রাশিয়ার ব্যাপারে সতর্ক করলেন বরখাস্ত টিলারসন

ঢাকা, ১৪ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : বরখাস্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেক্স টিলারসন তার বিদায়ী বিবৃতিতে রাশিয়ার ‘বিপজ্জনক আচরণ ও পদক্ষেপের’ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার টুইটারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এক বছরের কিছু বেশি সময় দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এক্সন মোবিলের সাবেক প্রধান নির্বাহী; সেখানেই উচ্চারণ করেন রাশিয়া নিয়ে সতর্কবার্তা।

টিলারসনের বিদায়ী বিবৃতিতে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানানো কিংবা তার নীতির প্রশংসা ছিল না বলেও জানিয়েছে বিবিসি।

“রুশ সরকারের একাংশের বিপজ্জনক আচরণ ও পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকি আছে। কী কী পদক্ষেপ রুশ জনগণ এবং বিশ্বের জন্য বিস্তৃত স্বার্থ রক্ষা করবে, রাশিয়ার উচিত সেসব সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করা। এখনকার পথে চললে তাদের অংশটি বড় ধরনের বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হবে, এমন এক ধরনের পরিস্থিতি, যা কারও স্বার্থে কাজে লাগবে না,” বলেন তিনি।

হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন নীতি বিষয়ে জনসম্মুখে বিরোধিতা করা টিলারসন তার মেয়াদে চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার বিষয়ে তার বিভাগের সফলতার কথাও উল্লেখ করেন।

রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতভিন্নতা থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে মঙ্গলবার বরখাস্ত করার কথা জানান ট্রাম্প।

টুইটে ট্রাম্প বলেন, “সিআইএ পরিচালক মাইক পম্পেও আমাদের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন। তিনি চমৎকার কাজ করবেন! রেক্স টিলারসন যে কাজ করেছেন তার জন্য তাকে ধন্যবাদ! গিনা হ্যাসপেল হবেন সিআইএর নতুন ডিরেক্টর এবং এই পদে তিনিই হচ্ছেন প্রথম নারী। সবাইকে অভিনন্দন!”

পরে হোয়াইট হাউসের বাইরে প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল।

“আমরা ভালোই চলছিলাম, যদিও আমাদের মধ্যে মতদ্বৈততা ছিল। আপনারা যদি ইরান চুক্তির দিকে তাকান, তাহলেও দেখবেন; আমি ওই চুক্তিকে বাজে মনে করি, অন্যদিকে তার থারণা- চুক্তিটি ঠিক আছে। মাইক পম্পেওর সঙ্গে আমাদের ভাবনার বেশ সাদৃশ্য আছে, এটা আরো ভাল হবে।”

ট্রাম্প বরখাস্ত করলেও ৩১ মার্চ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদেই থাকছেন এক্সন মোবিলের সাবেক এ নির্বাহী। পম্পেও দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত টিলারসনের ডেপুটি জন সুলিভানই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঝুলে থাকা কাজগুলো এগিয়ে নেবেন।

দায়িত্বভার হস্তান্তরে স্বচ্ছতা বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও টিলারসন জানিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেওয়ার আগে পম্পেও এবং হ্যাসপেলকে সিনেটের অনুমোদন পেতে হবে।

টিলারসনের বিদায়ই ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে মন্তব্য করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক্সন মোবিলের সাবেক এ প্রধান নির্বাহীর কয়েক মাসের উত্তেজনার নিরসন ঘটল।

বিবিসি বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বরখাস্তের ঘটনা নিয়েও দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।

হোয়াইট হাউস বলছে, শুক্রবারই চিফ অব স্টাফ জন কেলি টেলিফোনে টিলারসনকে বরখাস্তের কথা জানান। আফ্রিকা সফরে থাকা টিলারসন এসময় দেশে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ক আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিতে অনুরোধ করেন।

শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘অসুস্থ’ টিলারসন আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসছেন।

মঙ্গলবার ট্রাম্পের টুইটের আগেই ওয়াশিংটন পোস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বরখাস্তের খবরও দেওয়া হয়।

হোয়াইট হাউস এসব বললেও যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি স্টিভ গোল্ডস্টেইন এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের টুইটেই টিলারসন তার বরখাস্তের খবর প্রথম জানতে পারেন বলে দাবি করা হয়।

“মন্ত্রী এখনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেননি, এবং (বরখাস্তের) কারণও জানেন না,” এ বিবৃতির কিছুক্ষণ পরেই হোয়াইট হাউস গোল্ডস্টেইনকেও বরখাস্ত করে।

ট্রাম্প ঘনিষ্ঠদের বরাত দিয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিলারসনের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন না করার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তিনি প্রেসিডেন্টের পরামর্শ ছাড়া নিজেই তার মতো করে পররাষ্ট্র বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে চাইছিলেন। টিলারসন যে তাকে সমর্থন করছেন না, ট্রাম্পও তা উপলব্ধি করছিলেন।

এরমধ্যে টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প।

“ওই সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিয়েছি,” পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদলের ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি।

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কয়েক দশক ধরে পশ্চিমাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে থাকা উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম সাক্ষাৎ।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২২৫০ঘ.)