পম্পেওর বিতর্কিত বক্তব্যে ফিলিস্তিনজুড়ে তীব্র ক্ষোভ

পম্পেওর বিতর্কিত বক্তব্যে ফিলিস্তিনজুড়ে তীব্র ক্ষোভ

জেরুজালেমকে শুধু ইসরাইলের রাজধানী বলে ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের মনে কঠোর আঘাত দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর তিন বছরের মাথায় বৃহস্পতিবার অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলেরই অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইহুদি বসতিতে গিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ফিলিস্তিনিদের ক্ষোভে নতুন করে ঘি ঢাললেন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিতর্কিত পশ্চিমতীরে পা রাখলেন।

সেখানে গিয়ে পম্পেও বললেন, পশ্চিমতীরে তৈরি হওয়া যে কোনো পণ্য ‘মেড ইন ইসরাইল’ হিসেবেই বিদেশে রফতানি হওয়া উচিত। কারণ এই ‍ভূখণ্ড ইসরাইলেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। খবর আলজাজিরা ও রয়টার্স।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও আরও বলেন, পশ্চিমতীরে ইসরাইলের বসতি সম্প্রসারণকেও আর আন্তর্জাতিক আইনলঙ্ঘন বলে মনে করবে না ওয়াশিংটন।

গত বছর নভেম্বরে ঠিক এমনটাই বলেছিলেন ট্রাম্প। তার পাঠানো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে ফের সেই সুর শুনে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বে।

এরপর সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করা গোলান মালভূমিতেও আরেকটি অবৈধ ইহুদি বসতিতে সফর করেন রিপাবলিকান দলের হয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী পম্পেও।

ট্রাম্প প্রশাসনের আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এসব ইহুদি বসতিকে স্বীকৃতি দিত না। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই বসতিগুলোতে উৎপাদিত পণ্য ‘মেড ইন ইসরাইল’ বা ইসরাইলে তৈরি লেবেলযুক্ত করা যাবে বলে ঘোষণা দেয়ার পর বৃহস্পতিবার এ সফর করেন তিনি।

সিরিয়ার কাছ থেকে ১৯৬৭ সালে এই অংশটি জবরদখল করে ইসরাইল। গোলানকেও ইসরাইলের অংশ মনে করেন বলে জানান পম্পেও।

সফরকালে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পম্পেও ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বর্জন, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা (বিডিএস) আন্দোলনকে ‘ইহুদি-বিদ্বেষী’ হিসেবে ঘোষণা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সরকারি সহায়তা দানও বন্ধ করা হবে।

নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পম্পেও আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলি বসতিগুলোকে ভুল চোখে দেখে এসেছে। কিন্তু এখন তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে, বসতিগুলো বৈধ, যথাযথ ও সঠিক পদ্ধতিতে স্থাপন করা সম্ভব।

এদিকে নেতানিয়াহু বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের মিত্রতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর, গোলান উপত্যকা অধিগ্রহণকে স্বীকৃতি দান ও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান।

বার্তা সংস্থা এপি জানায়, ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইসরাইলি বসতিগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করে। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলো ইসরাইলি বসতিগুলোকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের স্বীকৃতিদান হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধের সময় জেরুজালেম, পশ্চিমতীর ও গোলান উপত্যকা দখল করে ইসরাইল। পরে গোলান উপত্যকা অধিগ্রহণ করে তারা। যদিও তাদের অধিগ্রহণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।