প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ইসরাইল

ক্ষমতা ছাড়ার আগে আগে ইরানে হামলা করতে পারেন ট্রাম্প

ক্ষমতা ছাড়ার আগে আগে ইরানে হামলা করতে পারেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ত্যাগের আগে আগে ইরানে সামরিক হামলা পরিচালনা করতে পারেন। আর এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম অ্যাক্সিওস এই চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে।

ইসরাইলি খ্যাতনামা সাংবাদিক বারাক র‍্যাভিদের করা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইসরাইল সরকার থেকে সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। অবশ্য, ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে হামলার নির্দেশ দেবেন বলে কোনো গোয়েন্দা তথ্য বা মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে না। তবে জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি কর্মকর্তারা ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগে আগে 'অত্যন্ত সংবেদনশীল সময়' আসতে পারে বলে ধারণা করছেন। তার ভিত্তিতেই প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সামরিক বাহিনীকে।

একাধিক ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, সরাসরি ইসরাইলের ওপর বা সিরিয়া, গাজা ও লেবাননে থাকা প্রক্সির মাধ্যমে ইরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারে আশঙ্কায় এই প্রস্তুতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্প সম্প্রতি তার জাতীয় নিরাপত্তা দলের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানের নাতানজে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। টাইমসের খবরে বলা হয়েছিল যে, ইরান ক্রমেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে বলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি এজেন্সি যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তারই ভিত্তিতে হামলার প্রসঙ্গ তুলেন ট্রাম্প। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও তাকে আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেন।

 

এরপর ট্রাম্প একমত পোষণ করেন যে, সরাসরি ইরানে হামলা করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সরাসরি হামলা না করলেও অন্যান্য বিভিন্ন বিকল্প তিনি বিবেচনা করেছেন।
এদিকে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গান্টজ গত দুই সপ্তাহে ট্রাম্পের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলারের সঙ্গে দুইবার কথা বলেছেন। এসব আলোচনায় ইরানের পাশাপাশি সিরিয়া পরিস্থিতি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়সমূহ প্রাধান্য পেয়েছে।

এর আগে গত রোববার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু সৌদি আরবে গিয়ে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বইন সালমানের সাথে দেখা করেছেন বলে একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সেসব আলোচনায় মূলত যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার একটি ছিল ইরান। গত সপ্তাহে ইরান ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও ইসরাইল ও বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় আরব দেশ সফর করেন। পম্পেওর সঙ্গে যেসব কূটনীতিক সফর করেছিলেন, তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, সব ধরণের বিকল্পই বিবেচনায় রয়েছে।

পম্পেওর সফরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড ঘোষণা দেয় যে, বি৫২ বোমারু বিমান সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে একটি মিশন সম্পন্ন করেছে। মিশনের লক্ষ্য ছিল একটি আগ্রাসন প্রতিহত করা ও মার্কিন মিত্রদের আশ্বস্ত করা। ওই মিশনকেও ইরানের প্রতি সিগন্যাল হিসেবে দেখা হয়েছিল।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার উপদেষ্টা ও আসছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হোসেন দেগান গত সপ্তাহে বার্তাসংস্থা এপিকে বলেছেন যে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যে পুরোদমে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলছেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সামরিক হামলা চালালে তাদেরকে আগেভাগে অবহিত করা হবে। কিন্তু তারপরও হয়তো পুরোদমে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে না। এই কারণেই হামলার সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।