গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অবরোধ, সম্পদ জব্দসহ নানা কঠোরতা দিচ্ছে ইইউ

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অবরোধ, সম্পদ জব্দসহ নানা কঠোরতা দিচ্ছে ইইউ

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা অবলম্বনের জন্য আইন করছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। এর ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ দিতে পারবে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। জব্দ করতে পারবে তাদের সম্পদ। এই আইনটি ‘ইউরোপীয়ান ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট’ নামে পরিচিত। এরই মধ্যে আইনটি অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। আগামী মাস থেকে এর প্রয়োগ শুরু হবে। ১০ই ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ৭৭তম বার্ষিকীতে এটি চালু হচ্ছে।

এর অধীনে গণহত্যা থেকে শুরু করে, নির্যাতন, নির্যাতন থেকে শুরু করে খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার ও আটক রাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে এই কঠোর বিধিনিষেধ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। ওই আইনের একটি কপি ফাঁস হয়ে গার্ডিয়ানের হাতে এসেছে।

এতে দেখা গেছে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়কে মোকাবিলার জন্য কঠোর এসব বিধিনিষেধ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ের সরকারগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং ভৌগোলিক দিক থেকে টার্গেট করে অবরোধ দেয়ার সামর্থ বর্তমানে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের নেই। ফলে হেগে নিজেদের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে ডাচ সরকার। তারপর গত নভেম্বরে ‘ইউএস ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট’-এর মতো করে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের জন্য একটি নিজস্ব সংস্করণ নিয়ে আলোচনা প্রথমে শুরু করে ডাচ সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের মূল আইনটি ২০১২ সালে স্বাক্ষর করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। রাশিয়ার আয়কর বিষয়ক আইনজীবী সের্গেই ম্যাগনিটস্কিকে হত্যার জন্য দায়ী এমন রাশিয়ান কর্মকর্তাদের টার্গেট করে এই আইন করা হয়েছিল।

ম্যাগনিটস্কি ছিলেন মস্কোর একজন আইনবিদ এবং আয়কর অডিটর। হারমিটেজ ক্যাপিট্যালের ম্যানেজমেন্ট ফার্মের নামে তিনটি কোম্পানিকে দেয়া রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ২৩ কোটি ডলারে রিবেট দুর্নীতি নিয়ে তিনি তদন্ত করছিলেন। তাকে যে কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করে তারাই তাকে জেলে ঢুকিয়ে দেয় এবং জেলখানার প্রহরিরা তাকে প্রহার করতে থাকে। কিন্তু কোনো রকম মেডিকেল বা চিকিৎসা ছাড়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি তাকে। এতে ৩৭ বছর বয়সে ২০০৯ সালে নিরাপত্তা হেফাজতে মারা যান তিনি। এর প্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্র ওই আইন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনের মতো করে একটি আইন করার জন্য ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে বার বার আহ্বান জানানো হয়েছে। এক পর্যায়ে নরডিক কাউন্সিল বলে পরিচিত- ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, ফারো আইল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যালান্ড মিলে বলে বসে যে, যদি ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ব্যর্থ হয় এমন আইন করতে তাহলে তারা নিজেরাই এ আইন করবে।

ওদিকে রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত আছে এমন তিনটি দেশ লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং এস্তোনিয়ায় এরই মধ্যে এমন আইন রয়েছে। ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়ার ক্ষমতা দিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্ট ‘স্যাংশনস এন্ড এন্টি-মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’ পাস করে। ২০১৮ সালে পাস করা এই আইনটি হলো ম্যাগনিটস্কি আইনের সংশোধিত রূপ। জুলাই মাসে এই ক্ষমতা প্রথম প্রয়োগ করে বৃটিশ সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব রাশিয়ার ২৫ জন সরকারি কর্মকর্তা সহ ৪৯ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে। এসব সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন জেলখানার ডাক্তার, মস্কোর একজন শীর্ষস্থানীয় প্রসিকিউটর অ্যালেকজান্দার বাসত্রিকিন, যিনি কিনা প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

তবে ইউরোপীয়ান ফ্রেমওয়ার্কে ম্যাগনিটস্কির নাম ব্যবহার করা নাও হতে পারে। এ বিষয়ে লবিং করছে ডাচ সরকার। তারা মনে করছে সুনির্দিষ্ট কোন রাষ্ট্রকে টার্গেট করা ঠিক হবে না। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র এমন আইন করায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এতটাই চটেছেন যে, মার্কিনিরা যাতে রাশিয়ান সন্তানদের দত্তক নিতে না পারেন সে জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি বিষ প্রয়োগ করেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের পরররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে বলেছেন, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের অবরোধের আওতায় এ জন্য দায়ীদের আনা হতে পারে।

এমজে/