বৈঠকের আগে কৃষক-পুলিশ সংঘর্ষে তেতে উঠল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা, চলল কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি

বৈঠকের আগে কৃষক-পুলিশ সংঘর্ষে তেতে উঠল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা, চলল কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি

হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা, শৈত্যপ্রবাহ ও বৃষ্টি সব কিছুই হার মেনেছে ভারতীয় কৃষকদের কাছে। ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য টানা ৩৮ দিন ধরে দিল্লির উপকণ্ঠে আন্দোলন চালাচ্ছেন কৃষকরা। সোমবার সপ্তম দফার বৈঠক। এ বৈঠকে সমস্যা সমাধানের কোনো সূত্র পাওয়া যায় কি না তা নিয়েই যত জল্পনা-কল্পনা।

বৈঠকের আগে রোববার দেশটির কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর দেখা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সাথে। সূত্র বলছে, এই অচলাবস্থা কাটাতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সঙ্কট কাটাতে সমস্ত সম্ভাব্য পথ নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। সোমবারের বৈঠকই কি শেষ, এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তোমর বলেন, ‘এটি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আমি জ্যোতিষী নই। তবে আশাবাদী, যে সিদ্ধান্তই ওঠে আসবে বৈঠকে তা দেশ ও কৃষকদের স্বার্থেই হবে।’

পর পর ছয়টি বৈঠক থেকে কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। ষষ্ঠ দফার বৈঠকে কৃষকদের দু’টি দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। সেগুলো হলো খড় পোড়ানোর জন্য মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে না এবং নয়া বিদ্যুৎ বিল আইন আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। এই দাবি মেনে নিলেও কৃষকদের মূল লক্ষ্য কৃষি আইন প্রত্যাহার ও এমএসপি। তাই সপ্তম দফার বৈঠক নিয়ে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। দেশটির সরকার কি এই দাবি মেনে নেবে, না কি বিকল্প কোনো প্রস্তাব রাখবে কৃষক সংগঠনগুলোর সামনে। ওই প্রস্তাব কি তারা মানবে, না কি অচলাবস্থা বহালই থাকবে? সোমবারের বৈঠকের আগে এই প্রশ্নগুলোই ঘুরছে দেশ জুড়ে।

অন্য দিকে সোমবারের এই বৈঠক নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলো। কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি গ্যারান্টির দাবি যদি সরকার না মানে তা হলে আন্দোলনকে আরো বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলো। এমনকি প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর বুকে র‌্যালি করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে তারা।

কৃষি সংগঠনগুলো আরো জানিয়েছে, যদি তাদের দাবি না মানা হয় তা হলে আগামী ১৩ জানুয়ারি নতুন কৃষি আইনের কপি পুড়িয়ে লোহরি উৎসব পালন করা হবে। কৃষক নেতা মনজিৎ সিংহের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই বলেছে, ‘আমরা ১৩ জানুয়ারি কৃষি আইনের কপি পুড়িয়ে লোহরি উৎসব পালন করব। ২৩ জানুয়ারি কিসান দিবস উদযাপন করব।’

সিংঘু সীমানায় আন্দোলনরত আরো এক কৃষক নেতা ওঙ্কার সিংহের কথায়, ‘সরকার তাদের একরোখা মনোভাব ছেড়ে বেরিয়ে আসুক। আমাদের আন্দোলন ৩৮ দিনে পড়েছে। আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত পিছু হটার প্রশ্নই আসে না। এটি সত্যি হতাশাজনক যে, এত জন কৃষক মারা যাওয়ার পরেও সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না।’

হাজার হাজার কৃষক কনকনে ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিল্লিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। এক কৃষক নেতা হরমিত সিংহ কাদিয়ানের বলেন, ‘বৃষ্টি পড়ছে। তাঁবুগুলোর ভিতরে যাতে পানি না ঢোকে ওই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কম্বল ও গরম পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বয়স্ক ও নারীদের জন্য।’

অন্য দিকে, সপ্তম দফার বৈঠকের আগের দিনই কৃষকদের আন্দোলনে আরো তেঁতে উঠল হরিয়ানা। কয়েক শ’ কৃষক দিল্লির দিকে মিছিল করে এগোতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। রেওয়ারি-আলওয়ার সীমানাতেই তাদের আটকে দেয় পুলিশ। সূত্র বলছে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিক্ষোভকারী কৃষকদের মধ্যে খণ্ডষুদ্ধ হয়। পরিস্থিতি সামলাতে বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে হয় পুলিশকে। রেওয়ারির পুলিশ প্রধান অভিষেক জোরওয়ালকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কৃষকরা এগনোর চেষ্টা করছিলেন। তাদের মাসানিতে একটি ওভারব্রিজের কাছে আটকে দেয়া হয়েছে।

অন্য দিকে পঞ্জাবের সাঙ্গরুর জেলায় এক দল বিক্ষোভকারী কৃষকের উপর লাঠিচার্জ করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজ্য বিজেপির সভাপতি অশ্বিনা কুমার শর্মা একটি বৈঠক করছিলেন। কৃষকরা ওই বৈঠকের দিকে মিছিল করে এগোতে গেলেই পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি হয়।

গাজিপুর সীমানায় আন্দোলন ক্রমশ বাড়ছে। এবার কৃষকদের পরিবারের সদস্যরাও আন্দোলনে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তাদের জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবার আয়োজনও করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন এলাকার বাজপুর থেকে গাজিপুর সীনামায় আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বাজপুরের এক সামাজ-কর্মী তথা কৃষক অজিত প্রতাপ সিংহ রানধওয়া বলেন, ‘গাজিপুর-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য কৃষক পরিবারের সদস্যদের জন্য সপ্তাহে দু’দিন অর্থাৎ সোম ও বৃহস্পতিবার বিনামূল্যে বাস পরিষেবা দেয়া হবে। যারা ট্র্যাক্টরে যেতে পারবেন না, তারাও এই সুবিধা পাবেন। বাজপুরে প্রচুর সংখ্যক কৃষক থাকেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই এই অঞ্চল থেকে অনেক কৃষক দিল্লিতে রয়েছেন।সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

এমজে/