যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সেনাপ্রধানেরা বিবৃতি দিয়ে দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখাসহ যেকোনো চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করার আহবান জানিয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক নেতৃত্বের এমন বিবৃতি বিরল এক ঘটনা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের লক্ষ্যে এর মধ্যেই একটি বিল প্রতিনিধি পরিষদে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবটি কংগ্রেসে অপেক্ষমাণ থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনী কার্যকর করে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে পদক্ষেপ না নিলে অভিশংসন প্রস্তাবটি প্রথমে প্রতিনিধি পরিষদে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও ভোটে যাবে। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আইন প্রণেতা জ্যামি রাসকিনের নেতৃত্বে নয় সদস্যের অভিশংসন কমিটি গঠন করেছেন। এসব আইনপ্রণেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স আগেভাগেই স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে দেওয়া এক চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি ২৫ তম সংশোধনী কার্যকর করবেন না।
সিনেটে এরই মধ্যে অন্তত তিনজন প্রভাবশালী রিপাবলিকান ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। দুই-তৃতীয়াংশের জন্য সিনেট রিপাবলিকানদের সর্বশেষ মতিগতির দিকে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে।
২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন শপথ নেবেন। ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দুপুরের পর থেকে প্রেসিডেন্ট থাকছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনাও আগে কখনো ঘটেনি। ক্ষমতায় নেই এমন একজন প্রেসিডেন্টের অভিশংসন নিয়ে কংগ্রেসে আইনপ্রণেতাদের বিতর্ক করার কোনো নজির নেই।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনে অনেক কিছু করার পূর্ব প্রতিশ্রুতি জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস প্রশাসনের। প্রশাসনের নতুন নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের সিনেটে শুনানি গ্রহণ এবং নিশ্চিতকরণ ছাড়া অনেক কিছুই করা সম্ভব হবে না। এমন সময়ে ট্রাম্পকে নিয়ে পড়ে থাকতে চাচ্ছেন না ডেমোক্র্যাট কৌশল প্রণয়নকারীরা।
৬ জানুয়ারির ঘটনার পর প্রথম জনসমক্ষে দেওয়া বক্তৃতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কোনো অনুশোচনা ছিল না। তার আহ্বানে আসা সমর্থকদের মৃত্যুর জন্য কোনো সমবেদনাও উচ্চারিত হয়নি তার কণ্ঠে।
অভিশংসনের ব্যাপারে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তাকে অভিশংসন করা নিয়ে 'জীন-পরি' খোঁজার মতো করে কাজ চলছে। নিজেকে শান্তিপ্রিয় মানুষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে অভিশংসন করার সংবাদ অনেক ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করার আহ্বানকে নিজের জন্য কোনো ঝুঁকিই মনে করেন না তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র তিন বাহিনীর প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের উদ্দেশ্যে নজিরবিহীন এক বিবৃতি দিয়েছেন। ১২ জানুয়ারি দেওয়া তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে থাকেন। যেকোনো চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করাই সংবিধান রক্ষার শপথের মর্মকথা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেনাবাহিনী সব-সময় বেসামরিক নেতৃত্বের আইনগত আদেশ পালন করে আসছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে ও দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুর হাত থেকে জনগণ ও সম্পদ রক্ষায় সেনাবাহিনী সব সময় সংবিধানকে সমুন্নত রেখেছে। এক পৃষ্ঠার এমন যৌথ বিবৃতিতে জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা স্বাক্ষর করেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থনে বেশ কিছু সেনা সদস্যের উপস্থিতি ছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে। এ নিয়ে এফবিআই জোর তদন্তে নেমেছে। এফবিআই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, তারা এর মধ্যেই দেড় শতাধিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। সহিংসতায় যোগ দেওয়া কেউ ছাড় পাবে না। ছবি দেখে, তাদের সেলফোন, সামাজিক যোগাযোগ তল্লাশি করে করে বিভিন্ন রাজ্যে ধরপাকড় শুরু হয়েছে।
এর মধ্যে জো বাইডেনের শপথকে ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা হতে পারে বলে এফবিআই সতর্ক করে দিচ্ছে। ট্রাম্প সমর্থক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা ১৭ জানুয়ারি থেকে রাজ্যে রাজ্যে সশস্ত্র সমাবেশের জন্য গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছে।