করোনা ঠেকাতে ইউরোপে আরও কড়াকড়ি

করোনা ঠেকাতে ইউরোপে আরও কড়াকড়ি

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ইউরোপে আরও কড়াকড়ি ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। ইস্টার সানডের ছুটিতে ব্যাপক সংক্রমণের উদ্বেগ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে এর দেশগুলো।

ইটালিতে ফের লকডাউন জারি করা হয়েছে। ব্রিটেনে টিকাদান শুরু হয়েছে বেশ আগেই। তবু লকডাউন চলছে।

ছয়জনের বেশি জমায়েত বারণ। সামাজিক ও পারস্পরিক দূরত্ববিধি ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এর মধ্যেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কেনিয়া ও ফিলিপাইনসহ ৩৫টি দেশকে ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করে এর নাগরিকদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।

সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, নতুন ভেরিয়ান্টের করোনার বাড়বাড়ন্ত রুখতে ব্রিটেন থেকে ওই সব দেশে সফরও করা যাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পাঁচ সপ্তাহ আগে ইউরোপে সাপ্তাহিক নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ১০ লাখের নিচে নেমে এসেছিল। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে এই অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। নতুন করে ১৬ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইউরোপে করোনায় মোট মৃত্যু দ্রুত ১০ লাখের দিকে এগোচ্ছে।

আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চার কোটি পার হতে যাচ্ছে। ইউরোপে ভ্যাকসিন কর্মসূচি অপ্রত্যাশিত ধীরগতিতে চলছে বলে সমালোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

সংস্থাটি বলছে, এই অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঢেউ আশঙ্কাজনক। ইস্টার সানডের ছুটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে ইস্টার সানডের ছুটি।

বিবিসি জানিয়েছে, ইতালিতে ইস্টার সানডেকে ঘিরে জনসমাগম ঠেকাতে তিন দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনে কোনো বাধা নেই। দেশটির সব অঞ্চলকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে।

নির্দেশনায় গির্জাগুলো উন্মুক্ত থাকলেও উপাসকদের তাদের নিজস্ব অঞ্চলের পরিষেবাগুলোতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। গত বছরের মতো এবারও পোপ ফ্রান্সিস জনশূন্য সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে ‘ইস্টার’-এর বক্তৃতা করবেন। ছুটির পরেও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে এই মাসের শেষ অবধি কমলা অঞ্চল বা রেড জোন এলাকায় কিছু বিধিনিষেধ থাকবে।

কঠোর লকডাউনের নিয়ম প্রয়োগের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ৭০ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে ইতালি সরকার। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মহামারির তৃতীয় ঢেউ চলছে।

প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার জনকে শনাক্ত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ইতালির অবস্থান সপ্তম। মোট করোনায় রোগীর সংখ্যা ৩৬ লাখ ২৯ হাজার জন। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন এক লাখ ১০ হাজার ৩২৮ জন।

আগে থেকে চলমান লকডাউনের মধ্যে নতুন করে আরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ব্রিটেন। শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগামী ৯ এপ্রিল ব্রিটেনের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা থেকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

ওই দিন যুক্তরাজ্য ভ্রমণের ‘রেড লিস্টে’ বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান, ফিলিপাইন্স ও কেনিয়াও যুক্ত হবে। এ তালিকায় আগে থেকেই আরও ৩৫টি দেশ রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্টের ভ্রমণবিষয়ক গাইডলাইনে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রী যদি এসব দেশ থেকে ব্রিটেনে যাওয়ার চেষ্টা করেন বা সর্বশেষ ১০ দিনের মধ্যে ওই তালিকার কোনো দেশে ভ্রমণ করে থাকেন, তাহলে তিনি ব্রিটেন প্রবেশের অনুমতি পাবেন না।

তবে তিনি যদি ব্রিটিশ বা আইরিশ নাগরিক হয়ে থাকে, অথবা যুক্তরাজ্যে যদি তার বসবাসের অনুমতি থেকে থাকে, তাহলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হবে। তবে সেজন্য তাকে বাধ্যতামূলকভাবে সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজের খরচে ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে কাটাতে হবে।

গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ফিলিপাইন্স ও কেনিয়া থেকে কোনো যাত্রী ৯ এপ্রিল ব্রিটিশ সময় ভোর ৪টার যুক্তরাজ্যে পৌঁছালে তাকে ঢুকতে দেওয়া হবে। তবে তাকে নিজের বসবাস স্থলে ১০ দিন ‘সেলফ আইসোলেশনে’ থাকতে হবে।

সেখানে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় ও অষ্টম দিন দুই দফা করোনা পরীক্ষায় উৎরাতে পারলে তবেই তাদের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশও ভ্রমণ কড়াকড়ি বাড়িয়েছে।

যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ এবং আরও ১২টি দেশ থেকে যাত্রীদের বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), যা শনিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে।

এমজে/