পারমাণবিক বোমা তৈরিতে একধাপ এগিয়ে গেলো ইরান

পারমাণবিক বোমা তৈরিতে একধাপ এগিয়ে গেলো ইরান

নতুন ও আরও উন্নত একাধিক সেন্ট্রিফিউজ চালু করেছে ইরান। সেন্ট্রিফিউজগুলোতে পরবর্তী ধাপের তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান।

সেইসঙ্গে পরমাণু কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রচেষ্টা হিসাবে বেশকিছু প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ও অর্জন প্রদর্শন করেছে দেশটি।

ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মধ্যে শনিবার আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এগুলোর উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

আলজাজিরা জানায়, শনিবার তেহরান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৬৪ আইআর-৬ সেন্ট্রিফিউজসহ দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। সঙ্গে সঙ্গে বেসামরিক ও মেডিকেল চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য প্রায় ১৫৫টি নতুন প্রযুক্তি পণ্যের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তিনি।

শুক্রবার ছিল ইরানের জাতীয় পরমাণু প্রযুক্তি দিবস। এ উপলক্ষ্যে এদিন থেকেই নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি এর আগে জানিয়েছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ খাতে সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে আইআর-৯ সেন্ট্রিফিউজের মেকানিক্যাল পরীক্ষা। এটি ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট্রিফিজউজ। এটি ইরানিরা নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি করেছেন এবং তা ভালো কাজ করছে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মঞ্চের সঙ্গে আণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশটি। আমেরিকাকে ফের চুক্তিতে ফেরানো নিয়ে আলোচনা হয়।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং পাঁচ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে যে আলোচনা চলছে তাতে এ পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো ফলাফল আসেনি। এ নিয়ে আগামী বুধবার থেকে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।

২০১৫ সালে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য- আমেরিকা, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। সেটির শর্ত মতে আণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকবে দেশটি। পাল্টা তেহরানের উপর থেকে বেশকিছু আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে আমেরিকাসহ চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো।

কিন্তু ২০১৮ সালে ইরানের বিরুদ্ধে আণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ এনে চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যায় আমেরিকা। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনায় সরব হয় ইরান।

তবে গত বছর মার্কিন মসনদ জো বাইডেনের দখলের যাওয়ায় ফের চুক্তিটিতে আমেরিকার শামিল হওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার ইরানের এহেন পদক্ষেপে সেই সম্ভাবনা আপাতত ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চলতি মাসের শুরুতেই ইরানের এক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেই ইরান ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে।

প্রেস টিভিকে এক সাক্ষাৎকারে ওই কর্মকর্তা বলেন, পরমাণু সমঝোতার ৩৬তম অনুচ্ছেদ অনুসারে ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চলছে এবং এই কর্মসূচি শুধু বন্ধ হতে পারে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আগ পর্যন্ত ইরান তার বর্তমান পারমাণবিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে না।

ইরানের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন সময় নষ্ট করছে। যদি শিগগিরই তারা ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে তাহলে তেহরান পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে যার ফলে পরমাণু সমঝোতায় দেওয়া প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন আরও কমে যাবে।’