বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্র উঠে দাঁড়িয়েছে: বাইডেন

বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্র উঠে দাঁড়িয়েছে: বাইডেন

বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উঠে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আবার সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সংকট কাটিয়ে আবার স্বপ্ন দেখছে। আবার কাজে নেমে পড়েছে।'

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন উপলক্ষে বুধবার রাতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বাইডেন এ কথা বলেন। বাইডেন তার ভাষণে বলেন, 'কংগ্রেসের এমন সভায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, শান্তি উদ্‌যাপন করেছেন। আজকে আমি দেশের সংকট ও সম্ভাবনার কথা বলতে এখানে দাঁড়িয়েছি।'

তিনি বলেন, 'মাত্র এক শ' দিন পর, আমি জাতির কাছে বলতে পারি, যুক্তরাষ্ট্র সামনে অগ্রসর হচ্ছে। ঝুঁকিকে সম্ভাবনায়, সংকটকে সুযোগে আর বাধাকে শক্তিতে পরিণত করেছে।'

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ভাষণ দেওয়ার আগে-পরে আইনপ্রণেতাদের দিকে এগিয়ে যান। মাস্ক পরে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কুশলবিনিময় করেন।

গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার কথা মাথায় রেখে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই ভাষণ উপলক্ষে ক্যাপিটল হিলসহ ওয়াশিংটন ডিসিতে গ্রহণ করা হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের দেওয়া ভাষণের সময় সরকারের সব বিভাগের ঊর্ধ্বতন লোকজনসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিতি থাকেন। কিন্তু চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য এবারের অধিবেশনে কমসংখ্যক লোক উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্দীপনাময় ভাষণের সময় ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতাদের দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে ১৩ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।' কর্মজীবীদের ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ১৫ ডলার করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে' বলেন, 'এ পরিকল্পনার ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সৃষ্ট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবীদের হবে। এ ধরনের ৭৫ শতাংশ কাজের জন্য কোনো কলেজ ডিগ্রির প্রয়োজন হবে না।'

বাইডেন বলেন, প্রথম এক শ' দিনের মধ্যে তার দশ কোটি করোনা টিকার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে বর্তমানে তার প্রশাসন ২২ কোটি টিকা সরবরাহ করেছে।

তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ হাজার ফার্মাসি ও সাত শ'র বেশি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টারে করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধী টিকা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।'

পিছিয়ে পড়া শ্রমজীবি ও মধ্যবিত্ত নাগরিকদের উন্নতিতে তিনি নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করছেন উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, 'এ লক্ষ্যে এক দশমিক আট ট্রিলিয়ন ডলারের সরাসরি সহায়তার ঘোষণা দিয়েছি।'

ভাষণে বাইডেন আবার আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, 'আফগানিস্তানের যুদ্ধ প্রজন্মের পর প্রজন্মের চালিয়ে নেয়ার জন্য ছিল না। নয় এগারোর সন্ত্রাসীদের শাস্তির জন্যই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে গিয়েছে।'

চীন ও অন্যান্য দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ২১ শতকে প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে বলে ভাষণে জানান বাইডেন। এই লক্ষ্যে দেশটিতে আরো নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র ও বিনিযোগ তৈরির কথা জানান তিনি।

ভাষণে বাইডেন বলেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জেনপিংকে জানিয়েছিলেন- ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতির মতোই ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলেও যুক্তরাষ্ট্রের জোরদার সামরিক উপস্থিতি থাকবে। তবে সংঘর্ষ সৃষ্টির জন্য নয় বরং সংঘর্ষ রোধ করতেই এই উপস্থিতি থাকবে।

একই সাথে রাশিয়ার সাথে কোনো উত্তেজনা চান না বলে জানান বাইডেন। বরং উভয়ের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র-রুশ সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

ইরান ও উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচিতে বিশ্বের জন্য হুমকির সম্ভাবনা রোধ করতে কূটনীতিক পন্থায় যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে চলছে বলে জানান বাইডেন।

জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত নীতি গ্রহণ করায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন।

ক্যানসারে নিজের ছেলের অকালমৃত্যুর কথা স্মরণ করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন চিকিৎসা ও গবেষণায় আরও বিনিয়োগের কথা বলেছেন।

অভিবাসন সংস্কার প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, 'তিন দশক ধরে শুধু কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু অভিবাসন নিয়ে কিছুই করা হয়নি। যেসব দেশ থেকে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের আগমন ঘটছে, সেসব দেশকে সাহায্য করে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী যাত্রা বন্ধ করতে হবে।'

গত বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচিত হন। নির্বাচনে জয় লাভের পর ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি।